গ্রামের মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাশে পড়ে প্লাস্টিকের পাউচ ও গ্লাস। নিজস্ব চিত্র
এই গ্রামের অলিতে গলিতে চলে চোলাই ঠেক। গ্রামের মহিলারা এলাকায় চোলাই বিক্রি রুখতে বহুবার পথে নেমেছেন। ভেঙে দিয়েছেন ঠেক। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি। রবিবার রাতে হাওড়া গ্রামীণের এই গ্রামে মেয়ের সম্মান রাখতে গিয়ে দুই মত্ত যুবকের হাতে খুন হয়ে গিয়েছেন এক বাসিন্দা। তারপরই ফের নিরাপত্তা ও চোলাই বন্ধের দাবিতে সরব হয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল সকলের চোখে-মুখে আতঙ্ক। এলাকায় অধিকাংশ চোলাই ঠেকে এ দিন তালা ঝুলছে। এক প্রৌঢ় জানান, গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাশেও দিনের বেলা রমরমিয়ে চলে ঠেক। নিরাপত্তার কারণেই সেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দিনে দিনে পড়ুয়া কমছে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি মেনে নিয়ে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমরা বহুবার ওই ঠেক সরানোর জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি। এটা কখনও পড়াশোনার পরিবেশ হতে পারে? কিন্তু আমাদের কথাশুনছে কে! পুলিশ ঠেক ভেঙে দিয়ে গেলে দু’দিন পর আবার গজিয়ে ওঠে।’’ ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার পাঁচ বছরের ছেলেকে এখানে পাঠাই। সে বাড়িতে গিয়ে মদ খাওয়ার গল্প বলে। উপায় নেই বলে ছেলেটাকে এখানে পড়তে পাঠাই।’’
দিনের আলো কমলে ওই মত্তরাই এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় বলে অভিযোগ। এক দম্পতি বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফিরতে রাত হয়েছিল। পথে দু’টো ছেলে মোটরবাইক নিয়ে আমাদের পিছু নিয়েছিল। কিছু নেয়নি ঠিকই। কিন্তু ভয় দেখিয়েছিল। অনেক দিন ভয়ে রাস্তামুখো হইনি। পুলিশের কাছে কোন ভরসায় যাব?’’ স্থানীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘সন্ধ্যায় আমরা সব বন্ধুরা একসঙ্গে শিক্ষকের কাছে পড়তে যাই। সঙ্গে বড় কেউ থাকেন। এলাকার ছেলেরা ভাল নয়।’’
এলাকাবাসীর অভিযোগের তির এলাকার চোলাই ঠেকগুলির দিকে। পুলিশের অভিযানের পরও কেন সেখানে তালা পড়ে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এক প্রৌঢ়ার কথায়, ‘‘আমার স্বামী চোলাই খেয়ে মারা গিয়েছিলেন। দুই ছেলেকেও খেয়েছে ওই চোলাই। আমি কত বার বাড়ির সামনের ঠেক ভেঙে দিয়েছি। এ জ্বালা কবে কমবে, জানি না।’’ তাঁর আরও ক্ষোভ, ‘‘পুলিশ সব জানে। চোলাই ঠেক থেকে পুলিশ মাসে মাসে টাকা নেয়। তাই ওরা কোনও ব্যবস্থা নেয় না। আর স্থানীয় নেতারাও ওই ঠেকগুলোকে মাথায় তুলে রেখেছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বলেন, ‘‘গ্রামে চোলাই ঠেক চলে, এটা সত্যি। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বার ঠেক ভাঙা হয়েছে। চোলাই বিক্রির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও চোলাই বিক্রি কমানো যাচ্ছে না। মানুষের নিজেদেরও একটু সচেতনতা দরকার।’’
আর হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতিদিন চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। কোনও অভিযোগ পেলেই তার তদন্ত করা হয়। এ বার গ্রামে নজরদারি বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy