আমতার গোবিন্দপুরে রূপনারায়ণের পাড়ের ধস ঘুরে দেখছেন বিধায়ক সুকান্ত পাল। ছবি: সুব্রত জানা
নিম্নচাপের জেরে শুক্র ও শনিবার হাওড়া-হুগলি, দুই জেলাতেই প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। হাসি ধরেছে চাষির গোমড়া মুখে। উল্টো ছবিও আছে। দু’দিনের বৃষ্টিতে কিছু ক্ষেত্রেও ক্ষতিও হয়েছে। উদয়নারায়ণপুরে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার প্রাণ কেড়েছে তরতাজা এক যুবকের।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ উদয়নারায়ণপুরের শিবপুরের মাইক ব্যবসায়ী গণেশ শাসমল (৩২) বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্রামের পুজো কমিটির মিটিংয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। বিদ্যুতের একটি তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়েছিল। তাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন গণেশ। তার জড়ানো অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালেনিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ওই বিপত্তি বলে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান।
কয়েক বছর ধরে গঙ্গার ভাঙনে একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে হুগলির বৈদ্যবাটী শহরের রাজবংশীপাড়ার ঘাট। শুক্রবার ঘাটের অনেকটা অংশ গঙ্গায় নেমে গিয়েছে। পাশের পোশাক পরিবর্তনের ঘর ভেঙেছে। ভাঙনের জেরে রাজবংশীপড়ায় ১৫০-২০০ মৎস্যজীবী পরিবার আতঙ্কে। জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক গৌতম অধিকারী জানান, ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ প্রকল্পে টাকা এলেই এখানে পাড় বাঁধানোর কাজ হবে।
গোঘাটের মণ্ডলগাঁথি গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বরের পাড়ে ধস বেড়েছে। একটি রিভার-পাম্প ঘর কার্যত ঝুলছে। অনেক জায়গায় রাস্তা চলে গিয়েছে নদের গর্ভে। গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এলাকাবাসী প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। ষষ্ঠী সাঁতরা, শঙ্কর মালিক প্রমুখ গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেচ দফতর বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ করেই খালাস। নদের অন্যত্র তাদের দৃষ্টি নেই। বন্যা হলে পাড় ধসে মণ্ডলগাঁথি তথা সংশ্লিষ্ট ভাদুর পঞ্চায়েত এলাকা ভাসবে। নদের পাড় মজবুত করতে বোল্ডার ফেলা দরকার বলে তাঁরামনে করছেন।
জেলা সেচ দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল বলেন, ‘‘পাড়ের ভাঙন দেখেছি। সংস্কারের প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোরপ্রক্রিয়া চলছে।’’
হাওড়ায় একাধিক জায়গায় হুগলি নদীর বাঁধের ভাঙন মেরামত হয়নি। তার উপরে নতুন করে রূপনারায়ণের পাড়ে ধস নেমেছে। আমতা-২ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুরে রূপনারায়ণে পাড়ে ২০০ ফুট ধস দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক সুকান্ত পাল। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, সামনের ভরা কটালে নদীর জল গ্রাম ভাসাবে। বিধায়ক জানান, ধসের বিষয়টি সেচ দফতরে জানিয়েছেন। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক চন্দ্রশেখর রপ্তান বলেন, ‘‘ভাঙন মেরামতের কাজ চলছে। আশঙ্কার কারণ নেই।’’
বৃষ্টিতে চাষির অবশ্য ভাল হয়েছে। গত আলুর মরসুমে পর পর নিম্নচাপ আলুচাষিদের কার্যত ডুবিয়ে ছেড়েছিল। এ বার ধানের মরসুমে উলটপূরাণ। চাষিরা বলেছেন, এ বার বর্ষায় তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় তাঁরা ধান চাষ করতে প্রথম থেকেই ভুগেছেন। বৃষ্টির ঘাটতি নিম্নচাপই পূরণকরতে পারে।
তারকেশ্বরের রামনগরের চাষি অনুপ ঘোষ বলেন, ‘‘বৃষ্টির আকালে অনেকেই সময়ে বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। এই বৃষ্টিতে খুবই উপকার হবে। আমি ৮ বিঘে জমিতে ধান বসিয়েছি ২০-২২ দিন আগে। আকাশের জল পেলে গাছ বাড়বে ভাল।’’ অন্য এক চাষি উত্তম খাঁড়া বলেন, ‘‘এ বার বর্ষায় বৃষ্টি এত কম হয়েছে যে, বীজতলা তৈরির সময় ডিভিসি-র জল ছাড়তে হয়েছিল। এই বৃষ্টি চাষিদের পয়সাও বাঁচাবে। পকেটের টাকা খরচ করে সেচ দিতে হবে না। আকাশের জলেই কাজ হবে।’’ পুরশুড়ার কেলেপাড়ার চাষি বাপ্পাদিত্য ধোলে বলেন, “এখনও পর্যন্ত যা বৃষ্টি হয়েছে, তা আমন ধান এবং আনাজ চাষের কাজে উপকারেই লাগছে।ধানে জলের ঘাটতি ছিল। সেটা মিটেছে।’’ চাষিদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে কৃষি দফতর এবং উদ্যানপালন দফতরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy