পঞ্চায়েত অফিসের তালা খুলছেন তৃণমূল উপপ্রধান (বাঁ দিকে)। শাটার খুলতেই বেরিয়ে আসে আটকে থাকা কুকুরটি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
সন্ধ্যাবেলা পঞ্চায়েত অফিসে নিজের জন্য বরাদ্দ ঘর তালাবন্ধ করে বাড়ি ঢুকেছেন সবে। মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে চোখ যেতেই ভ্রু কুঁচকে গেল পঞ্চায়েত উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগের। অফিস তো বন্ধ করে এলেন। অফিসের ল্যান্ড ফোন থেকে কে ফোন করছে! ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বললেন তৃণমূল নেতা। কিন্তু ও পার থেকে সাড়া নেই। কিছু ক্ষণ পর কুকুরের কান্না শুনতে পেলেন বিশ্বজিৎ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অফিসে ছোটেন। দরজা খুলে দেখলেন সেখানে একটি কুকুর আটকে ছিল।
এই ঘটনায় কার্যত হতবাক উপপ্রধান-সহ পঞ্চায়েতের কর্মীরা। ফোনটা কি কুকুরই করল? ঘরে তো আর কেউ নেই, আর কেই বা করবে ফোন? এ সব নানা প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তাঁদের। যদিও উপপ্রধান নিশ্চিত যে, ফোনটি এসেছে সারমেয়র কাছ থেকেই। কারণ, তিনি যখন অফিসে বসে ফোনে কথা বলতেন, কুকুরটি সব খেয়াল রাখত।
হুগলির গুপ্তিপাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ। তিনি জানান, অফিসের ল্যান্ডলাইন নম্বরটি হটলাইন করা আছে। কেউ অফিস থেকে রিসিভার তুললেই তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে ছিলেন। পঞ্চায়েত অফিসের ল্যান্ডলাইন নম্বর থেকে ফোন আসায় অবাকই হন তিনি। কারণ, একটু আগে নিজেই অফিসের শাটার টেনে তালা দিয়ে এসেছেন। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের ফোনটি হটলাইন করা আছে আমার মোবাইলের সঙ্গে। কেউ রিসিভারে হাত দিলেও মেসেজ চলে আসে। আমি ফোন তুলে ‘হ্যালো’ বললাম। কোনও সাড়া নেই। বার কয়েক ‘হ্যালো’ বলার পর ভৌ ভৌ আওয়াজ পেলাম। তার পর কুকুরের কান্না। আমি আর দেরি না করে অফিসের দিকে ছুটে যাই।’’
সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত উপপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন। কারও হাতে টর্চ। কেউ মোবাইলের ‘ফ্ল্যাশ অন’ করে আছেন। কী ঘটবে, না ঘটবে ভেবে দু’এক জন মোবাইলে ভিডিয়ো রেকর্ডার অন করেছেন। উপপ্রধান নিজের হাতে শাটার তুলতেই দেখতে পেলেন একটু কুকুর বসে তাঁর অফিসে। তিনি ‘আয়, আয়’ ডাক দিতেই গা ঝাড়া দিয়ে সে এক ছুটে বেরিয়ে রাস্তায় চলে যায়। তার ‘মুক্তির আনন্দ’ দেখে উপপ্রধানের মুখে তখন একগাল হাসি। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত অফিসের সামনে মোট ১১টি কুকুর থাকে। ওদের দেখভাল আমরাই করি। শনিবার তাদের একটি যে অফিসে ঢুকে রয়েছে, বুঝতে পারিনি।’’ কিন্তু ফোনটা কে করল? উপপ্রধান বিশ্বাস করেন কুকুরই রিসিভার থেকে ফোনটা তুলেছিল। কারণ ওরা প্রায়শই দেখে যে তিনি ফোন তুলে কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেমন কথা বলার পর ফোন রেখে দিই, অফিসে ঢুকে দেখলাম তেমনই ঠিক ভাবে রাখা আছে টেলিফোন। ওর টানাহ্যাঁচড়ায় পড়েও যায়নি।’’ উপপ্রধান সারমেয়ের কাণ্ডে যতটা মুগ্ধ, ততটাই বিস্মিত অন্যরা। তাঁরা শুধু একটাই কথা বলছেন, ‘‘ফোনটা সত্যিই ও-ই করল?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy