উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিবাদ মিছিল চিকিৎসকদের।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার থেকে কর্মবিরতিতে নামলেন হাওড়া ও হুগলি—দুই জেলারই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদরে একাংশ। কোথাও মিছিল হল, কোথাও কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ। কর্মসূচির জেরে কিছু হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা সাময়িক ব্যাহত হয়।
উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘সিনিয়র রেসিডেন্ট’ এবং ‘জুনিয়র রেসিডেন্ট’ হিসাবে কর্মরত চিকিৎসকেরা কাজ করেননি। তাঁরা হাসপাতাল চত্বরে প্রতিবাদ-মিছিল করেন। যোগ দেন কলেজ হাসপাতালের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া এবং হাসপাতালের নার্সিং কলেজের পড়ুয়ারা। মিছিলে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কলেজ হাসপাতালে সুষ্ঠু নিরাপত্তার দাবি ওঠে। জরুরি বিভাগ-সহ অন্যান্য বিভাগেও আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা কাজ করেননি।
এই কর্মবিরতির জেরে সকালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়। রোগীদের লাইন বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামতে হয় হাসপাতালের সিনিয়র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা উপাধ্যক্ষ অগ্নিহোত্রী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে। যা ঘটেছে, তা নিন্দনীয়। তবে কর্মবিরতিতে চিকিৎসা পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিনিয়র এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কলেজের অধ্যাপকেরা পরিষেবা দিচ্ছেন। আগামী এক সপ্তাহ কোন চিকিৎসক কোন বিভাগে পরিষেবা দেবেন, তা-ও চূড়ান্ত হয়েছে।’’
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তোলেন, এই হাসপাতালে নিরাপত্তার বালাই নেই। ছাত্রীদের অস্থায়ী ছাত্রীনিবাসের সামনে সিসিক্যামেরা বা পুলিশি নিরাপত্তা নেই। ‘অন কল’ মহিলা চিকিৎসকদের বিশ্রামকক্ষের সামনে সিসিক্যামেরা নেই। আন্দোলনকারীদের দাবি, চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে শুভদীপ বসু বলেন, ‘‘আমরা কর্মবিরতি পালন করলেও কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সিনিয়র চিকিৎসকদের দিয়ে পরিষেবা চালাতে চান, তাতে বাধা দেব না।’’ অগ্নিহোত্রী বলেন, ‘‘দু’এক দিনের মধ্যে সিসিক্যামেরা বসানো হবে। সেই সব জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ছাত্রীনিবাস, নার্সিং কলেজ এবং হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পুলিশি ব্যবস্থার জন্য গ্রামীণ জেলা পুলিশকে বলা হয়েছে।’’
চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করেন প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকেরা। পোস্টার-প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁরা হাসপাতাল চত্বরে মিছিল করেন। বিচারের দাবি ওঠে। আন্দোলনে শামিল হন প্রশিক্ষণরত নার্সেরাও। মিছিল শেষে নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবি সংবলিত স্মারকলিপি তাঁরা তুলে দেন হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডলের হাতে। শিক্ষার্থী-চিকিৎসক দীপান্বিতা দাস বলেন, ‘‘জরুরি পরিষেবা চালু রেখেই আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। আমরা চাই, আরজি কর-কাণ্ডের দ্রুত বিচার। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবি সুপারকে জানানো হয়েছে। একটি কমিটি গঠন করে দাবিগুলি খতিয়ে দেখা হোক।’’ সুপার বলেন, ‘‘স্মারকলিপির দাবিগুলি আগেই স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই বাস্তবায়ন করা হবে।’’
সিনিয়র চিকিৎসকেরা সেখানে পরিষেবা চালু রেখেই প্রতিবাদে শামিল হন। প্রতিবাদস্বরূপ তাঁরা বহির্বিভাগের নির্দিষ্ট ঘর ছেড়ে লিফটের সামনে চেয়ার-টেবিল পেতে রোগী দেখেন। চিকিৎসক সোমনাথ দাস বলেন, "আমরা এমন একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত যা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে পারি না। তবে, আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ দরকার। সে জন্যই আমাদের এই পন্থা।"
উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেলে এ দিন স্বাভাবিক কাজ হয়। সব বিভাগ চালু ছিল। শুধুমাত্র যে সব চিকিৎসক স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করছেন, তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছেন তিন দিন ধরে। হাসপাতালের সুপার মহম্মদ মহসিন জানান, শনিবার থেকে ১১ জন স্নাতকোত্তরের পাঠরত চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদের ছাড়াই হাসপাতালে কাজ চলছে।’’ চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালেও চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়নি বলে জানান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তনুজ দাস। তিনি জানান, কালো ব্যাজ পরে চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy