বন্ধের আগে আনন্দভবন ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুলের দুই পড়ুয়া। ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতি বদল এনেছে দিনযাপনে। পরিবর্তিত অবস্থায় বদলেছে স্কুলের ধারণাও। গত দেড় বছরে শ্রেণিকক্ষে নয়, ক্লাস হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বাড়ি বসে অনলাইন-পাঠে পড়ুয়ারা ধীরে ধীরে অভ্যস্তও হয়ে উঠছে। কিন্তু এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা, বিশেষত অন্ধ ও মূক-বধিররা। কারণ, এমন পড়ুয়াদের শেখার মাধ্যম মূলত স্পর্শ ও ইঙ্গিত নির্ভর। অনলাইন-পাঠে সেই সুযোগ নেই।
হাওড়ার জগৎপুরে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি স্কুল আছে। পড়ুয়াদের সংখ্যা একশোর কিছু বেশি। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় সেখানে। পড়ুয়ারা সকলেই আবাসিক। অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পরে ‘রাইটার’ নিয়ে উচ্চশিক্ষার পড়াশোনা করে তারা। মূলত ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিতে পড়ানো হয় স্কুলে।
এই স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবকের কথায়, ‘‘আমার ছেলে জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। অনেক চেষ্টা করে প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। দেড় বছর স্কুল বন্ধের জেরে পড়া থেকে সে শতহস্ত দূরে। যা শিখেছিল সব ভুলে গিয়েছে।’’ অন্য এক পড়ুয়ার মায়ের কথায়, ‘‘ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা হয় স্কুলে। ওই মাধ্যমে আমাদের গ্রামে কে পড়াবে? অনলাইন ক্লাসেরও ব্যবস্থা নেই।’’
‘আনন্দভবন ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুল’ নামে জেলার যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে ৩০ জন দৃষ্টিহীন ও ৫০ জন মূক-বধির পড়ুয়া রয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষক অজয় দাস বলেন, ‘‘দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষা অনেকাংশে স্পর্শ নির্ভর। বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকরাই এই পদ্ধতিতে পড়াতে পারেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা অনলাইনে সম্ভব নয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ করোনা পরিস্থিতিতে সব পড়ুয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশই প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা। সেখানে সব সময় নেটওয়ার্ক থাকে না। আবার সব পড়ুয়ার স্মার্টফোন কেনার মতো আর্থিক অবস্থাও নেই। ফলে অনলাইনে পড়াশোনার বিষয়টি এক্ষেত্রে সোনার পাথরবাটির মতোই।’’
অনেক অভিভাবকের দাবি, পড়ুয়াদের করোনা টেস্ট করিয়ে ফেরানো হোক আবাসিক স্কুলে। এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘ওরা বাড়িতে যেমন থাকে, ওখানেও সে ভাবেই নিয়ম মেনে থাকবে। আর স্কুলে ফিরলে পঠনপাঠনেও সুবিধা হবে।’’ হাওড়া সমগ্র শিক্ষা মিশনের বিশেষ শিক্ষিকা মৌমিতা মণ্ডল মেনে নিয়েছেন বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয়গুলি আবাসিক। তাই প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে স্কুল চালু হতেই পারে। না হলে পিছিয়ে পড়া শিশুগুলো আরও পিছিয়ে পড়বে।’’
জনশিক্ষা প্রসার দফতরের অধিকর্তা দেবাশিস গুহঠাকুরতা সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘সাধারণ স্কুল যখন খুলবে তখনই এই বিশেষ স্কুলগুলোও খোলা হবে। আশা করা যায়, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে পুজোর পরই স্কুলে যেতে পারবে পড়ুয়ারা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy