উলুবেড়িয়ার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বাণীতলায় দুয়ারে রেশন। নিজস্ব চিত্র
রেশন দোকানে যেতে হল না উপভোক্তাকে। চাল-গম পৌঁছে গেল বাড়িতে। গণবণ্টন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে রাজ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল বুধবার। ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প।
উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়া না পর্যন্ত এই প্রকল্পে আপত্তি রয়েছে রেশন ডিলার সংগঠনের। পরীক্ষামূলক কর্মসূচির ক্ষেত্রে সেই আপত্তি টেকেনি। হাওড়া-হুগলি দুই জেলাতেই প্রথম দিনের কর্মসূচি নির্বিঘ্নে হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।
হুগলি জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, এখানে রেশন ডিলার রয়েছেন ১২৪০ জন। তার মধ্যে ১৯০ জনকে (গ্রামাঞ্চলে ১৪৮ জন, শহরাঞ্চলে ৪২ জন) নিয়ে পরীক্ষামূলক কর্মসূচি শুরু হয়। খারাপ আবহাওয়া, বাড়ি বাড়ি দিতে গেলে সামগ্রী নষ্ট হবে প্রভৃতি কারণ দেখিয়ে ডিলারদের একাংশ বেঁকে বসেছিলেন। পরে খাদ্য দফতরের পাশাপাশি প্রশাসন তৎপর হতে সমস্যা মেটে। আরামবাগ মহকুমায় ৪৮ জনকে কর্মসূচিতে শামিল করা হয়। শুরু করেছিলেন মাত্র ১২ জন। পরে ব্লক প্রাশাসন এবং খাদ্য দফতরের হস্তক্ষেপে প্রত্যেকেই কাজে নামেন। কিছু জায়গায় বুড়িছোঁয়া করে কাজ হয়েছে বলে উপভোক্তাদের অভিযোগ। কিছু জায়গায় ডিলার শুধু নিজের বাড়ি এবং দোকানের আশপাশে কিছু মানুষকে সামগ্রী দিয়েছেন।
গোঘাটের আশপুরের রেশন ডিলার জগন্নাথ কোলে বলেন, ‘‘নিজের গ্রামে দু’টি পাড়ায় প্রায় ৩০ জন উপভোক্তাকে সামগ্রী দিয়েছি। আবহাওয়ার খারাপ থাকায় অন্যত্র যাওয়া যায়নি।’’ অনেক ডিলার জানান, ইন্টারনেট সমস্যায় যন্ত্রে আঙুলের ছাপ নিয়ে স্লিপ বের হতে ৫-৬ মিনিট করে সময় লেগেছে। জগন্নাথের কথায়, ‘‘এ ভাবে বছরভর কী ভাবে চলবে! আমার কাছে ৪১৪০ জন উপভোক্তা আছেন।’’
ডিলারদের অভিযোগ, অনেক জায়গায় রাস্তা খারাপ। ছোট রাস্তায় গাড়ি ঢুকবে না। যন্ত্রে উপভোক্তার আঙুলের ছাপ নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও ইন্টারনেটের সমস্যায় সর্বত্র তা করা যাবে না। সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ডিলাররা। চন্দননগরের রেশন ডিলার হরনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়িতে সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া অনেক হ্যাপা এবং খরচসাপেক্ষ। এই দিকটা দেখা হোক।’’
জেলা খাদ্য নিয়ামক আসীমকুমার নন্দী বলেন, ‘‘পরের মাসে আরও ৩৫% ডিলারকে নামানো হবে। ডিলারদের অসুবিধা খতিয়ে দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে নভেম্বর থেকে সব ডিলারকে শামিল করা হবে।’’ জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল জব্বার বলেন, ‘‘সকালে বৃষ্টির জন্য কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। পরে সব ডিলারই খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছেন। কোথাও সমস্যা হয়নি।’’ চলতি মাসে ৮ এবং পরের মাসে ১৬ দিন দুয়ারে রেশন দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। চন্দননগরের বাসিন্দা সুষমা বসু বলেন, ‘‘প্রকল্পটি খুবই ভাল। তবে, রেশন দিতে আসার দিনক্ষণ আগে জানালে ভাল হয়।’’
হাওড়ায় সদর মহকুমার ৩৫ এবং উলুবেড়িয়া মহকুমার ৬৮ জন ডিলার এ দিন পাড়ায় পাড়ায় খাদ্যসামগ্রী বিলি করেন। সপ্তাহে চার দিন করে দেওয়া হবে এই পরিষেবা। জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রথম দিন প্রত্যেক ডিলার সুষ্ঠু ভাবে খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছেন।
সকালে উলুবেড়িয়ার বাণীবনে ছোট ট্রাকে রেশন বিলি করা হয়। ‘ই-পস’ যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন নেন উপভোক্তারা। পরিষেবায় খুশি এলাকাবাসী। পলাশ আদক নামে এক গ্রাহকের কথায়, ‘‘লাইন দিয়ে রেশন নিতে অনেক সময় নষ্ট। সেটা হবে না।’’ ডিলার সনৎকুমার পাল বলেন, ‘‘নির্বিঘ্নেই খাদ্যসামগ্রী
বিলি হয়েছে।’’
বেশির ভাগ গ্রাহক মাসের প্রথমেই রেশন তুলে নেওয়ায় এ দিন কর্মসূচিতে তেমন ভিড় হয়নি। ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিকাশ বাগ বলেন, ‘‘আসল পরীক্ষা মাসের প্রথমে। তবে, সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy