— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আরও একটা কেন্দ্রীয় বাজেট চলে গেল। কিন্তু বাংলার তাঁতের জন্য এ বারও কোনও সুখবর এল না। ফুলিয়া-ধনেখালির তাঁতঘরে যেমন হতাশা, তেমনই বিষ্ণুপুরের বালুচরি বা মুর্শিদাবাদের রেশম শিল্পীদের ঘরেও।
রাজ্যের বয়নশিল্পের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র নদিয়ার ফুলিয়া-শান্তিপুরে কেউ একেবারেই হতাশ, কেউ আবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজেট খুঁটিয়ে দেখতে চেয়েছেন, সুরাহার কোনও দিশা দেখা যাচ্ছে কি না। ফুলিয়ার অঞ্জন বসাক, সত্যজিৎ দাসেরা বলেন, “আমাদের আশা ছিল, কেন্দ্রীয় বাজেটে তাঁত শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য নতুন প্যাকেজ ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু সে রকম কিছুই নেই।” আর এক তাঁত শিল্পী সুব্রত দাস বলেন, “বাজেটের পুরোটা এখনও বুঝে নেওয়া সম্ভব হয়নি। আলাদা করে তাঁত শিল্পের কথা না বলা হলেও অন্য কোনও দিক থেকে তাঁত শিল্পের সহায়ক প্রস্তাব আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।”
হুগলির অন্যতম বয়নকেন্দ্র ধনেখালি অনেক দিন ধরেই ভুগছে। বিক্রিবাটা কমেছে। নতুন শিল্পীর দেখা নেই। ধনেখালি ব্লকে একাধিক তাঁত সমবায় থাকলেও এখন আর রমরমা নেই। ধনেখালি ইউনিয়ন তাঁতশিল্প সমিতির অধীনে এক সময় শ’পাঁচেক তাঁতি ছিলেন। এখন তার সিকি ভাগ। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাজেটে কোনও ছাড় বা ভর্তুকি তাঁদের অক্সিজেন জোগাতে পারত। কিন্তু সে গুড়ে বালি। সমবায়ের সম্পাদক দীনবন্ধু লাহার আক্ষেপ, ‘‘কেন্দ্রের কোনও সাহায্যই আমরা পাই না। তাঁতশিল্পের জন্য বাজেটে টাকা বরাদ্দ হয় কোথায়!’’ তাঁর দাবি, রাজ্যের তন্তুজ, বঙ্গশ্রী, বিশ্ব বাংলা, মঞ্জুষার মতো সরকারি সংস্থা বরং শাড়ি কিনে কিছুটা পাশে দাঁড়ায়।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তৈরি বালুচরির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তাঁতিদের অনেকেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পুরস্কার পেয়েছেন। বারোশো তাঁতযন্ত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় পাঁচ হাজার তাঁতি কাজ করেন। বালুচরি, স্বর্ণচরি ছাড়াও তাঁতের শাড়ি, গামছা প্রভৃতি তৈরি হয়। বালুচরি শিল্পী চন্দন দে, গোবর্ধন পালেদের ক্ষোভ, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, বাজেটে আমাদের শিল্প নিয়ে কোনও আশ্বাস থাকবে। কিন্তু কিছুই তো নেই!’’ রাজ্য সরকারের প্রশিক্ষণ ও শাড়ি কেনার কথা জানিয়ে তাঁদের আক্ষেপ, “কেন্দ্র তো বালুচরি শাড়ি নিয়ে প্রচারটুকুও করে না!”
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, রানিনগর, ইসলামপুর, রঘুনাথগঞ্জ, জিয়াগঞ্জ, বহরমপুরের নানা জায়গায় রেশম শিল্পীরা ছড়িয়ে রয়েছেন। বেলডাঙা রেশম শিল্পী সমবায় সমিতির সম্পাদক স্বপনকুমার দে বলেন, ‘‘এখানকার রেশম শিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। শিল্পী ও সমবায়গুলিকে ঋণ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দেওয়া দরকার। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাজেটে তো আমাদের জন্য কিছুই নেই।” ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রেশম শিল্পীরা মার খেয়ে অন্য কাজে চলে যাচ্ছেন। তার পরেও কেন্দ্রীয় বাজেটে এই শিল্পের জন্য কিছু বরাদ্দ না হওয়ায় আমরা হতাশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy