খালের উপর গোবরের স্তর। নিজস্ব চিত্র।
‘গোবর নদী’ ডানকুনির নিকাশি ব্যবস্থা শেষ করেছে। এ বার পুলিশি তদন্তেও অন্তরায় হয়ে উঠেছে হুগলির ডানকুনি খালে জমাট বাঁধা গোবর। সেখানে অনেক তল্লাশিতেও বীরভূমের ইলামবাজারের নিখোঁজ বেকারি ব্যবসায়ী শামিম খান এবং ছোট ট্রাকের চালক বরুণ মুর্মুর দেহ উদ্ধার হয়নি।
গোবরের মোটা স্তর ভেদ করতে নাকাল পুলিশ। কখনও কোদাল দিয়ে গোবর সরানো হচ্ছে, কখনও পে-লোডার দিয়ে। ডুবুরি, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নেমেছে। কিন্তু দেহের খোঁজ মেলেনি। পুলিশ কুকুরও গন্ধ শুঁকে সূত্র দিতে ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে দেহ উদ্ধার করতে খাল সংস্কারের দাবি জানিয়েছে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর পরিবার। খালকে নির্মল চেহারায় ফেরাতে একই দাবি শহরবাসীরও।
ব্যবসার কাজে গত ৪ অগস্ট বরুণের গাড়ি করে ডানকুনিতে এসেছিলেন শামিম। পরের দিন থেকে তাঁদের খোঁজ মিলছিল না। পরে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে ট্রাকটি মেলে। তদন্তে নেমে জামালপুর থানার পুলিশ আখতার আলি, শেখ আব্দুল করিম ওরফে কালো এবং শেখ সামিম ওরফে বাবু নামে ডানকুনির তিন যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানায়, শামিম-বরুণকে খুন করে দেহ দু’টি ডানকুনি খালে পুঁতে দিয়েছে।
১২ অগস্ট থেকে ডানকুনি খালে দেহ খোঁজা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার কালোকে এনে ডোঙাঘাটায় ওই খালে তার দেখানো জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করেও দেহ মেলেনি। পুলিশ জানায়, খালের উপরের অংশে গোবরের স্তর থাকায় তল্লাশিতে সমস্যা হচ্ছে। গোবরের স্তরের নীচে জলের স্রোত বইছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘অত গোবর সরিয়ে খোঁজা কঠিন! তবুও, চেষ্টা চলছে। তদন্তের অভিমুখ ঘোরাতে ধৃতেরা অসত্য বলছে কিনা, তাও দেখা হচ্ছে।’’
শামিমের আত্মীয়দের আশঙ্কা, দেহ না মিললে প্রমাণাভাবে দুষ্কৃতীরা ছাড় পেয়ে যেতে পারে। শামিমের কাকা শেখ ফাইজল বলেন, ‘‘দু’জনের খোঁজ না পেলে তো অভিযুক্তরা খালাস হয়ে যাবে। খাল থেকে পুরো গোবর তুলে তল্লাশি করা হোক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা সিবিআই তদন্ত দাবি করছি।’’
ডোঙাঘাটার বাসিন্দা মমতাজ খানের আক্ষেপ, ‘‘খালে জোয়ার-ভাটা হত। মাছ ধরতাম। গত ২০-২৫ বছরে একের পর এক খাটাল হয়েছে। গরু-মোষের গোবরে খাল ভরেছে। খালের দু’পাড়ে প্রায় তিনশো-সাড়ে তিনশো খাটালের জন্যই নিকাশির সমস্যা। খাল সংস্কার করা হোক।’’
গোবরের জন্যই দেহ মিলছে না বলে মমতাজ এবং স্থানীয় অনেকে মনে করেন। গত ২১ বছর ধরে নটবর দাসের খাটাল রয়েছে ওই এলাকায়। তিনিও বলেন, ‘‘গোবরের জন্য তল্লাশি ব্যাহত হচ্ছে।’’ খালে গোবর ফেলেন কেন? এর উত্তর নটবর দেননি।
গোবর এমন ভাবে খালকে ঢেকেছে, দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সেটি জলাশয়। অনেক জায়গায় গোবরের উপরে আগাছা বংশবৃদ্ধি করেছে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, গোবর বালিখাল দিয়ে বয়ে গঙ্গার দূষণ বাড়াচ্ছে। দূষণের হাত থেকে এই খাল বাঁচাতে অনেক আন্দোলন হলেও প্রতিশ্রুতি আর চিঠি-চালাচালি বাদে সরকারি দফতর কিছু করেনি বলে অভিযোগ। খাল সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
চাষাবাদ আর নিকাশির কথা ভেবে ডানকুনি খাল কাটা হয়েছিল। পরে চাষ কমে। ডানকুনি শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য ফেলার জায়গা হয় এই খাল। বাম জমানায় কলকাতা থেকে খাটাল উচ্ছেদ হয়। প্রায় দেড়শো খাটাল এই খালপাড়ে উঠে আসে। পরে আরও খাটাল গজিয়ে ওঠে। শুক্রবার দেখা গেল, নতুন একটি খাটাল তৈরি হচ্ছে।
অভিযোগ, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে খালের অবস্থা শুধরোয়নি। সমর্থন হারানোর ভয়ে শাসক দল খাটাল-মালিকদের ঘাঁটায়নি। প্রশাসনও চুপ করে থেকেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy