স্ত্রী ও নাতির সঙ্গে মুরারি (গামছা পরে)। দম্পতির মাঝে এক প্রতিবেশীও। নিজস্ব চিত্র।
জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ! কোথায় যাবেন মুরারি নন্দীরা?
বাইরে থাকলে পুলিশের তাড়া খাওয়ার ভয়। প্রবল গরমে ঘরেও থাকার জো নেই। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত পাখা ঘোরে না।
বড় আতান্তরে পড়েছেন মুরারি এবং তাঁর মতো শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলের কটন ইউনিটের শ্রমিক আবাসনের বাসিন্দারা। করোনার কঠিন সময়ে সংক্রমণ রুখতে মানুষকে গৃহবন্দি থাকার কথা বলছে প্রশাসন। কিন্তু মুরারিরা ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের যে ঘুপচি-ঘরে থাকেন, সেখানে এই গরমের দুপুরে দিনের পর দিন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে থাকতে তাঁরা প্রায় আধমরা হয়ে গিয়েছেন।
বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধের আকুল জিজ্ঞাসা, ‘‘কোথায় যাই বলতে পারেন? ঘরে আমরা চার (স্ত্রী, মেয়ে এবং নাতি) জনে থাকি। দুপুরে তিষ্ঠোতে পারি না। ছোট্ট জানলা দিয়ে হাওয়া-বাতাস ঢোকে না। সকাল হলেই ভাবতে থাকি, কখন সন্ধে ৬টা বাজবে? পাখা চলবে। ১২ ঘণ্টা কষ্ট যে আরও কত দিন সইতে হবে, কে জানে! এটাই এখানকার নিয়ম।’’
শ্রীরামপুরের ধর্মতলায় এই শ্রমিক-লাইনের আবাসনে কোয়ার্টারের সংখ্যা শ’দেড়েক। মুরারি এই মিলে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন ৪২ বছর আগে। ২০১৩ সালে অবসর নিয়েছেন। এখন এখানকারই অস্থায়ী শ্রমিক। বছর দু’য়েক ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন। ওষুধ খেতে হয়। নিয়মিত কাজে যেতে পারেন না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সূর্য তখন মাঝ আকাশে। পারদ চড়েছে ৩৫ ডিগ্রি। অনুভবে প্রায় ৪২ ডিগ্রির ছ্যাঁকা। গলদঘর্ম হয়ে শুধু গামছা পরে রাস্তার ধারে গাছের তলায় বসেছিলেন মুরারি। আরও অনেকেরই একই দশা। ঘরের কাজ সেরে মহিলাদেরও অনেকটা সময় মিল-লাইনের চৌহদ্দিতে গল্প করে কাটে।
মুরারি বলেন, ‘‘শরীরটা ভাল নয়। সন্ধে পর্যন্ত গাছের তলায় বসেই সময় কাটানোর চেষ্টা করি। ভয়ও লাগে। পুলিশের তাড়া না খেতে হয়! আগের বার লকডাউনে এমন হয়েছিল। এখন পুলিশের গাড়ি দেখলেই ঘরে ঢুকে পড়ি। সব সময় কারেন্ট থাকলে এই অবস্থা হবে না।’’ একই বক্তব্য ওই আবাসনের বাসিন্দা পবিত্রকুমার সাউয়েরও।
মুরারির ঘরে ঢোকার মুখে একফালি বারান্দা আছে। সেখানেই রান্নাবান্না করেন স্ত্রী অমরাবতী। তাঁরও প্রশ্ন, ‘‘পাখা ছাড়া এই গরমে ঘরে টেকা যায়, বলুন? এ দিকে, করোনার জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। কী দশা আমাদের! নাতিটাকে ঘেমেনেয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। দেখলে কষ্ট হয়।’’
এই অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন জানাচ্ছে ওই শ্রমিক মহল্লা। বিষয়টি নিয়ে শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে অনুরোধ করেছেন এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর শম্ভুনাথ রায়। শম্ভুবাবু বলেন, ‘‘অদ্ভুত পরিস্থিতি। অতিমারির সময়ে শ্রমিক পরিবারের লোকেরা ঘরে যাতে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থাটুকু জরুরি।’’ মিলের কমার্শিয়াল ম্যানেজার অনিরুদ্ধ যাদব জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তী এ নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy