Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Mining Activity

অবাধে চরের মাটি কেটে বিক্রি, ‘সঙ্কটে’ দামোদর

শ্যামপুর ২ ব্লকের বাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়গড়চুমুক এলাকার বাসিন্দারা জানান, নদের চর দখল করে চাষাবাদ করতেন কিছু কৃষক। তাঁরা সেই জমি দালালদের বেচে দিচ্ছেন।

শ্যামপুর বারগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বারগড়চুমুকে দামোদরের চর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে।

শ্যামপুর বারগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বারগড়চুমুকে দামোদরের চর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৯
Share: Save:

নির্বিচারে কোপ পড়ছে দামোদরের চরে। যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকের পর ট্রাক বোঝাই করে পাঠানো হচ্ছে ইটভাটায়। হাওড়ার শ্যামপুরে এই দৃশ্য রোজকার। পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, যেমন ইচ্ছে মাটি কাটা চললে সমূহ বিপদ। তাতে নদের গতিপথ বদলে যেতে পারে। বিঘের পর বিঘে চাষের জমি তার গর্ভে চলে যাবে। সেই ধাক্কা আসবে জনপদেও। ক্ষতি হবে পরিবেশের।

কারবারিদের অবশ্য সে সব ভাবনা নেই। তাঁরা মুনাফা দেখছেন। বেআইনি ওই কাজের কথা শুনে প্রশাসনের কোনও দফতর জানিয়ে দিয়েছে, বিষয়টি গোচরে নেই। কেউ বসে অভিযোগের অপেক্ষায়। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, প্রশাসন কি জেগে ঘুমোচ্ছে?

শ্যামপুর ২ ব্লকের বাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়গড়চুমুক এলাকার বাসিন্দারা জানান, নদের চর দখল করে চাষাবাদ করতেন কিছু কৃষক। তাঁরা সেই জমি দালালদের বেচে দিচ্ছেন। প্রশাসনের অনুমতির তোয়াক্কা না করে দালালরা গভীর করে চরের মাটি কেটে নিচ্ছে। গ্রামের মানুষের একাংশের অভিযোগ, দালালদেরসঙ্গে শাসকদলের যোগ রয়েছে। তাই বুক ফুলিয়ে দিনের বেলাতেই বেআইনি ওই কাজ চলে। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। চাষিদের অভিযোগ, কৃষিজমির উপর দিয়ে মাটি বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। খেতের দফারফা হয়। অথচ, ভয়ে তাঁরা কিছু বলতে পারেন না। এমন চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে চাষের জমি ধসে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

বাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রণব ঘোষের দাবি, প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে দামোদরের চরের মাটি কাটার ঘটনা তাঁর জানা নেই। খোঁজ নেবেন। বেআইনি ভাবে ওই কাজ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্লক ভূমি আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তীও জানান, বিষয়টি তাঁর গোচরে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। আর হাওড়া জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মাটি-কারবারিরা অবশ্য দোষের কিছু দেখছেন না। দীনবন্ধু প্রধান নামে এক কারবারির বক্তব্য, শ্যামপুরের প্রায় সব ইটভাটা নদনদীর চর থেকে মাটি কেটে ব্যবসা করে। তাই তিনিও এই পেশায় নেমেছিন। এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। তুষার মণ্ডল নামে এক ভাটা-মালিকের বক্তব্য, ‘‘কিছু ঠিকাদার আছেন, যাঁরা ভাটায় মাটি সরবরাহ করেন। আমরা তাঁদেরই বরাত দিই। তাঁরা কোথা থেকে মাটি আনছেন, জানি না।’’ এক মাটি কারবারির যুক্তি, ‘‘দামোদর মজে যাচ্ছে। তার মাটি কাটা হলে ক্ষতি কোথায়? তাতে তো ড্রেজ়িং হচ্ছে!’’ এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা বলছেন, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে না করে এলোপাথাড়ি মাটি কাটলে তা ড্রেজ়িং নয়। বরং তাতে বিপদ বেশি।

হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপি সভাপতি অরুণউদয় পাল চৌধুরীও অভিযোগ, ‘‘শাসকদলের মদতেই অনিয়ম চলছে। প্রশাসন সব জেনেও চুপ।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা জুলফিকার মোল্লা অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও বেআইনি কাজে তৃণমূল মদত দেয় না। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, জানি না। খোঁজ নেব। বেআইনি ভাবে মাটি কাটা হলে পুলিশকে বলব, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’’

কাজের কাজ কতটা হবে, প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী।

অন্য বিষয়গুলি:

Shyampur Damodar River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy