কুম্ভ মেলায় সাধুসন্তরা। — ফাইল চিত্র।
একই ভাগীরথীর দুই পাড়। নামেও সেই একই ‘কুম্ভমেলা’। কিন্তু যাত্রা শুরুর এক বছরের মধ্যেই চিড় ধরেছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে। তার জেরেই এ বার হুগলির ত্রিবেণী তো বটেই, নদীর উল্টো দিকে কল্যাণীর মাঝেরচরেও মেলা বসানো হয়েছে।
বাংলায় কী ভাবে ‘কুম্ভমেলা’ হতে পারে সেই বিতর্কের মাঝেই এই দ্বন্দ্ব নতুন করে সামনে আসছে।
ত্রিবেণীর দিকে মেলা পরিচালনায় সহযোগিতা করে তৃণমূল পরিচালিত বাঁশবেড়িয়া পুরসভা। মেলা কমিটির নাম ‘ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালন সমিতি’। কল্যাণীতে মেলা কমিটির নাম ‘বঙ্গ কুম্ভমেলা পরিষদ’। যার নিয়ন্ত্রণ মূলত সাধুসন্ত নিয়ে গঠিত ‘সনাতন সংস্কৃতি সংসদ’-এর হাতে। মজার ব্যাপার, রবিবার তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিবেণীর ‘কুম্ভমেলা’র কথাই সগৌরবে বলেছেন। কল্যাণীর মেলার কথা উচ্চারণও করেননি।
কেন একই গঙ্গার দু’পাড়ে দু’টি আলাদা কুম্ভমেলা?
সনাতন সংস্কৃতি সংসদ সূত্রের দাবি, গত বছর ত্রিবেণীতে মেলা শুরুর সময়ে তারাই পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। যদিও সে সময়ে সংসদের রেজিস্ট্রেশন ছিল না, পরে করা হয়। ত্রিবেণীর মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা হিসাবে যে আমেরিকা-প্রবাসী কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা বলেছেন মোদী, প্রথম বছরে তিনিও সংিসদের সঙ্গেই ছিলেন। কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিচিত আরও দু’জন ‘ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালন সমিতি’ নামে একটি ‘রেজিস্টার্ড ট্রাস্টি’ গঠন করেন। সংসদ ও মেলা কমিটির সভাপতি হন স্বামী প্রদীপ্তানন্দ। এ বার তিনি মেলা করার জন্য বাঁশবেড়িয়া পুরসভার অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু পুরসভা তার উত্তর দেয়নি। এ বার মেলা কমিটির সভাপতি হন বাঁশবেড়িয়ার পুরপ্রধান, তৃণমূলের আদিত্য নিয়োগী। এর পরেই সনাতন সংস্কৃতি সংসদ ভাগীরথীর উল্টোদিকে মাঝেরচরে ‘পাল্টা’ মেলার আয়োজন করে, যা আড়ে-বহরে লোকসমাগমে ত্রিবেণীর তুলনায় অনেকটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়।
পুরপ্রধান আদিত্যের দাবি, ‘‘গত বছর বারাসতের একটি সাধুদের সংস্থা এসেছিল। বলেছিলাম, ত্রিবেণীর সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন কোনও সংস্থাকে এখানে মেলার অনুমতি পুরসভার তরফে দেওয়া হবে না। এর পরে উদ্যোক্তা হিসাবে ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালন সমিতি গঠন করা হয়। গত বছর ওঁরা এক সঙ্গে যুক্ত থেকে মেলার আয়োজনে ছিলেন। তাঁদের একাংশই এ বার ও পাড়ে চলে যান।’’ আদিত্য আরও জানান, কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়দের একটি গবেষক-দল রয়েছে। ত্রিবেণীর ঐতিহ্য নিয়ে তারা গবেষণার কাজ করছে।
বর্তমানে ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালন সমিতিতে কোনও সাধুসন্ত নেই বলে দাবি সনাতন সংস্কৃতি সংসদের। এ কথা মানেননি আদিত্য। সংসদ সূত্রের বক্তব্য, এই মেলার সঙ্গে যেহেতু ‘কুম্ভ’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে, তা সাধুসন্তদের নেতৃত্বেই হওয়া উচিত। সংসদের সম্পাদক স্বামী নির্গুণানন্দ বলেন, “ত্রিবেণীর মেলা কমিটিতে সভাপতির পদে কোনও সাধু না থাকায় আমরা বেরিয়ে এসে পৃথক ভাবে মাঝেরচরে মেলা করেছি।” মেলার মাত্র দিন কুড়ি আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্বিতীয় মেলার জন্য সাধুসন্তদের অনেকেই প্রাথমিক ভাবে টাকা জোগাড় করেন। সাধুসন্তদের একটা অংশ অবশ্য ত্রিবেণীর মেলাতেও উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার আমেরিকা থেকে ফোনে কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলেন, “কল্যাণীর দিকে শুধু গঙ্গা রয়েছে। ওখানে কেন ‘কুম্ভমেলা’ হল,জানি না।” বাংলার হৃত ঐতিহ্য ফেরাতেই তাঁরা ‘ত্রিবেণী তীর্থে’মেলা করছেন বলেও তিনি দাবি করেন। পুর-কর্তৃপক্ষেরও একই মত। আদিত্যের বক্তব্য, ‘‘বাঁশবেড়িয়া এবং চুঁচুড়া-দেবানন্দপুর জুড়ে থাকা নানা দ্রষ্টব্য পর্যটন সার্কিট হয়ে উঠুক। কুম্ভস্নান আমাদের কাছে প্রথম বিচার্য নয়। প্রথম বিবেচ্য পর্যটন মানচিত্রে এই জায়গা তুলে ধরা। কুম্ভস্নানতার একটা মাধ্যম হোক। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ুক।’’
কালের ফেরে কাদের ‘কুম্ভ’ টিকে যায়, কোনওটি আদৌ টেকে কি না, সে তো পরের কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy