Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Chinsurah

বিপর্যয় সামাল দিতে আদৌ তৈরি জেলা হাসপাতাল?

সব বিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। ট্রলি ঠেলে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার কাজ বাড়ির লোককে করতে হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত মেলে না।

চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৯:০৬
Share: Save:

আর পাঁচটা হাসপাতালের তুলনায় পরিকাঠামো ভাল। কিন্তু, কেউ যদি ভাবেন, চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে সব পরিষেবা মিলবে, ভুল হবে। নানা অভাব-অভিযোগ শোনা যায় কান পাতলেই। অতএব, বড় কোনও দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়ের মোকাবিলায় কতটা তৈরি হুগলির জেলা সদর হাসপাতাল, প্রশ্ন থাকছেই।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, শয্যাসংখ্যা রয়েছে ২৬০টিরও বেশি। সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, ইসিজি-র মতো পরিষেবা ২৪ ঘণ্টা মেলে। রক্তের সরবরাহও মন্দ নয়। তা হলে, সমস্যা কোথায়?

অভিযোগ, সব বিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। ট্রলি ঠেলে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার কাজ বাড়ির লোককে করতে হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত মেলে না। ফলে, চিকিৎসা সময়ে শুরু করা যায় না। অস্ত্রোপচারের দিন এত দেরিতে ফেলা হয়, নিরুপায় হয়ে বহু মানুষ নার্সিংহোমে ছোটেন। অস্থি বিশেষজ্ঞ মাত্র একজন। ফলে, রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। এই বিভাগে জটিল অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। নিউরোলজিস্ট, হৃদরোগ, গ্যাসট্রোএন্ট্রোলজিস্ট নেই। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) শয্যা সাকুল্যে ১৩টি।

বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যা রয়েছে, মানছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য অসিত মজুমদার। তবে, তাঁর দাবি, গুজরাতের মোরবীর মতো ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ইমামবাড়া তৈরি। কী ভাবে? তাঁর যুক্তি, অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৫০-৬০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা এখানে দ্রুততার সঙ্গেই হয়েছে বিশেষ যত্ন নিয়ে। এ ক্ষেত্রে সব চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মীকে কাজে নামিয়ে দেওয়া হয়। যাঁদের ‘ডিউটি’ সেই সময় নেই, তাঁদেরও। হাসপাতালের এক আধিকারিকেরও দাবি, ‘‘বড় দুর্ঘটনা ঘটলে, সামাল দেওয়ার পরিকাঠামো এখানে রয়েছে। তবে, অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির লোকই আহতকে ছাড়িয়ে অন্যত্র নিয়ে যান।’’

হাসপাতাল সূত্রের দাবি, গ্যাসট্রোএন্ট্রোলজিস্ট, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, নিউরোলজিস্ট চেয়ে রাজ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অস্থি বিশেষজ্ঞের জন্যও দরবার করা হচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-সহ আরও কিছু শূন্যপদ পূরণ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্যও স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে। শয্যাসংখ্যা বাড়ানো দরকার বলে অনেকেই মনে করছেন।

হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃমমূল কাউন্সিলর সমীর সরকার বলেন, ‘‘পরিষেবা যথেষ্ট ভাল। তবে, কিছু ক্ষেত্রে পরিকাঠামো আরও ভাল করা দরকার। হার্ট, নিউরো, গ্যাসট্রোএন্ট্রোলজির পাশাপাশি আরও অন্তত এক জন অর্থোপেডিক সার্জন জরুরি।’’

বিধয়কের বক্তব্য, পরীক্ষার রিপোর্ট দেরিতে পাওয়ার অভিযোগ মাঝেমধ্যেই তাঁদের কাছে আসে। তিনি বলেন, ‘‘এখন সরকারি হাসপাতালে সব পরিষেবাই বিনামূল্যে মেলে। ফলে, রোগীর প্রচুর চাপ থাকে। পরীক্ষাও অনেক হয়। সে কারণে রিপোর্ট দিতে এক-আধ দিন দেরি হয়। তবে, রোগীর অবস্থা জটিল থাকলে, চিকিৎসকদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনে বাড়তি তৎপরতার সঙ্গে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়া হয়।’’

বিজেপি নেতা স্বপন পালের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘পরিষেবা বেহাল। চিকিৎসকদের একাংশ ব্যক্তিগত চেম্বার নিয়ে বেশি মাথা ঘামান। হাসপাতালে রোগী হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন। রেফার তো রোজকার ঘটনা। অর্ধেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। যেখানে ডাক্তার, ওয়ার্ড বয়ের অভাব, সময়ে পরীক্ষার রিপোর্ট মেলে না, সেখানে বড় বিপর্যয় সামাল দেওয়ার দাবি স্রেফ ভাঁওতা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chinsurah Multi Speciality hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy