—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
‘নিচু জাত’ তুলে খোঁটা দিয়ে প্রৌঢ়া মা ও তিন সন্তানকে প্রতিনিয়ত অপমান করা হত বলে অভিযোগ। তা নিয়ে গত ২৩ নভেম্বর হুগলির একটি থানায় ডায়েরি করেছিলেন ওই মহিলা। অভিযুক্ত হিসেবে তৃণমূলের তিন নেতার নামও উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রৌঢ়ার অভিযোগ, তার কোনও তদন্ত তো হয়ইনি। উল্টে তারপর থেকে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। অভিযোগ, ডায়েরি তোলার জন্য চাপ দিতে তিন সন্তানের সামনে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। আর তাঁর দুই মেয়েকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।
সন্তানদের কথা চিন্তা করে চলতি মাসের পয়লা তারিখ ফের থানায় অভিযোগ জানিয়ে ঘর ছাড়েন মহিলা। বর্তমানে তাঁরা আত্মীয়দের বাড়িতে রয়েছেন। গত ৫ তারিখ তফসিলি জাতি ও উপজাতি আইনে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ওই প্রৌঢ়াকে বর্তমানে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সাকির হোসেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এমন গুরুতর বিষয়কে শুধুমাত্র জেনারেল ডায়েরি করে ছেড়ে দেওয়া হল কী করে? আর তফসিলি জাতি-উপজাতি আইনে মামলা রুজু হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।’’
হুগলি (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘এফআইআর হয়ে থাকলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’’ আর ডেপুটি পুলিশ সুপার (ক্রাইম) অভিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘এফআইআর হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে হুগলির একটি এলাকায় থাকেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই মহিলা। প্রায় ১২ বছর ধরে মহিলার স্বামী নিখোঁজ। ওই মহিলা পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর অভিযোগ, বছর দেড়েক ধরে এলাকায় তাঁদের জাত নিয়ে খোঁটা দিতে শুরু করেন এলাকার তিন তৃণমূল নেতা। সম্প্রতি অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছিল। ওই পরিবারের সদস্যদের এলাকার কল থেকে জল নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত ২৩ নভেম্বর থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রৌঢ়া। তাঁর অভিযোগ, তা তোলার জন্য একদিন অভিযুক্তরা বাড়িতে এসে তাঁকে বিবস্ত্র করে মারধর করে। মারের হাত থেকে তাঁর সন্তানরাও বাদ পড়েননি। এমনকি উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দুই মেয়েকে গণধর্ষণ করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই চলতি মাসের পয়লা
তারিখ ফের থানায় অভিযোগ জানান ওই মহিলা।
বুধবার, গোপন জবানবন্দির জন্য চুঁচুড়া আদালতে এসেছিলেন ওই মহিলা ও তাঁর বড় মেয়ে। আদালত সূত্রে খবর, পুলিশের কাছ থেকে মামলা সংক্রান্ত নথি না আসায় কাজ হয়নি। ওই প্রৌঢ়া এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘অত্যাচার থেকে বাঁচতে পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধানের পায়ে পড়েছি। সব শুনে ওরা খালি হেসেছে। এ সব মামলার ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু এমন অসম্মানের কোনও সুরাহা পাব না?’’ প্রৌঢ়ার বড় মেয়ে বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরতে ভয় করছে। বোনের সঙ্গেই আমারও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। কী ভাবে সেটা দেব, জানি না।’’
তবে অভিযুক্তদের এক জনের দাবি, ‘‘এই পাড়ায় কাউকে কল থেকে জল নিতে বাধা দেওয়া হয়নি। আর ওই মহিলার বাড়ি গিয়ে হুমকি, শ্লীলতাহানির প্রশ্নই নেই।’’ অন্য আর এক অভিযুক্তের কথায়, ‘‘এত বছর ওঁরা এই পাড়ায় আছেন। হঠাৎ কেন ওঁদের জাত তুলে খোঁটা দেব? মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।’’
বিষয়টি তেমন ‘গুরুতর’ নয় বলেই দাবি ওই এলাকার তৃণমূল উপপ্রধানের। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে ওই মহিলা কোনওদিন আমাদের কাছে আসেননি। তবে, তিনি স্থানীয়দের কাছে যতটা শুনেছি, তাতে বিষয়টি এত বড় নয়।’’
বিষয়টি নিয়ে জেলার এক বিজেপি নেতার কটাক্ষ, ‘‘দলের নেতারা না চাইলে কর্মীরা এমনটা করার সাহস পায় না। এর সঙ্গে তৃণমূলের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অরিন্দম গুঁইন বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই।
আমি অবশ্যই খোঁজ নেব। তবে, অভিযোগ সত্যি হলে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy