নাবালিকার বাবা মেয়ের জ্বর সারানোর জন্য ওঝা ডাকেন। সেই ওঝা এসে ঝাড়ফুঁক করেন। তিনি জ্বরের কারণ হিসেবে দায়ী করেন প্রতিবেশীকে। —প্রতীকী চিত্র।
প্রতিবেশী নাবালিকার জ্বর হয়েছে। তার জন্য দায়ী করা হল সন্তানহারা এক মাকে। ওঝার এমনই নিদান পেয়ে ওই মহিলাকে ডাইনি অপবাদে মারধরের অভিযোগ হুগলির দাদপুরে চক কৃষ্ণপুর গ্রামে। প্রতিবেশীদের চাপে ভিটে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন পূর্ণিমা এবং সনাতন দুর্লভ নামে এক দম্পতি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামের ১৩ বছরের একটি মেয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। গত সপ্তাহে নাবালিকার বাবা মেয়ের জ্বর সারানোর জন্য ওঝা ডাকেন। সেই ওঝা এসে ঝাড়ফুঁক করেন। তিনি জ্বরের কারণ হিসেবে দায়ী করেন প্রতিবেশীকে। বলেন, ‘‘মেয়েটিকে ডাইনি ধরেছে।’’ বছর খানেক আগে সন্তানহারা পূর্ণিমাকে দায়ী করা হয় এ জন্য। দেওয়া হয় ডাইনি অপবাদ।
অভিযোগ, এর পর গ্রামে সালিশি সভা বসে। সেখানে পূর্ণিমা এবং তাঁর স্বামীকে ডাকা হয়। নিদান দেওয়া হয়, তাঁদের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। দম্পতি এর প্রতিবাদ করতেই তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর মধ্যে খবর পায় দাদপুর থানার পুলিশ। তারা দম্পতিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের পরামর্শ, কিছু দিন কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকুন দম্পতি।
কিন্তু সেই পরামর্শ মেনেও সমস্যায় পড়েছেন ওই দম্পতি। তাঁরা জানান, আত্মীয় বাড়ি গেলে সেখানেও তাঁদের ঠাঁই হয়নি। এখন বাধ্য হয়ে চুঁচুড়া রেল স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। সোমবার পূর্ণিমা জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। বাড়িতে যেতে পারছেন না ভয়ে। জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরতে চেয়ে দাদপুর পঞ্চায়েত এবং থানায় আবেদন করেছেন দম্পতি। কিন্তু তাঁরা গ্রামে ফিরলে আবার আক্রমণ হতে পারে, এই আশঙ্কায় নাকি ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন।
গত শুক্রবার থেকে সফিউল ইসলাম নামে দাদপুরের এক শিক্ষকের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন ওই দম্পতি। সফিউলের কথায়, ‘‘গ্রামে এখনও কুসংস্কার রয়েছে। তাই দম্পতিকে জোর করে গ্রামে ফিরিয়ে দিলেই হবে না। গ্রামবাসীদের মন থেকে ডাইনির কুসংস্কার দূর করতে হবে। এ জন্য বিজ্ঞান মঞ্চকে নিয়ে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। আর ওঝাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
পূর্ণিমার কথা শোনার পর দাদপুর পঞ্চায়েতের প্রধান জয়া মিদ্দার প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই ঘটনা পোলবা-দাদপুরের বিডিওকে জানানো হয়েছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে প্রৌঢ় দম্পতির বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হবে।’’ হুগলির জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া বলেন, ‘‘স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy