Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Cruelty on Animals

পাখিদের মরণফাঁদ এ বার শহরেও

রবিবার সকালেই চুঁচুড়ার ২ নম্বর কাপাসডাঙার লক্ষ্মীনারায়ণ পল্লির একটি পুকুরের উপরে পাতা নাইলনের ‘ফাঁদিজালে’ আটকে পড়া একটি বক (ব্ল্যাক হেডেড হেরন)।

জাল কেটে উদ্ধার করা হচ্ছে একটি পাখিকে। নিজস্ব চিত্র

জাল কেটে উদ্ধার করা হচ্ছে একটি পাখিকে। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ দাস
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০২
Share: Save:

গ্রামের পরে এ বার শহরাঞ্চলেও পাখিদের জন্য পাতা হচ্ছে মরণফাঁদ!

গাছের ফল এবং পুকুরের মাছ বাঁচাতে হুগলির শহরাঞ্চলেও শুরু হয়েছে যথেচ্ছ ‘ফাঁদিজাল’ (ট্র্যাপ নেট) ব্যবহার। ফলে, খাবারের সন্ধানে এসে ওই জালে আটকে বক, শামুকখোল, পানকৌড়ি-সহ নানা ধরনের পাখি হতাহত হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। পাখি রক্ষায় আইন থাকলেও তার ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে পাখিপ্রেমীরা। এর বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আবেদনও জানাচ্ছেন তাঁরা।

রবিবার সকালেই চুঁচুড়ার ২ নম্বর কাপাসডাঙার লক্ষ্মীনারায়ণ পল্লির একটি পুকুরের উপরে পাতা নাইলনের ‘ফাঁদিজালে’ আটকে পড়া একটি বক (ব্ল্যাক হেডেড হেরন)। খবর পেয়ে পাখিটিকে উদ্ধার করতে যান ব্যান্ডেলের পাখিপ্রেমী চন্দন ক্লেমেন্ট সিংহ। তিনি জানান, বকটির পায়ে জাল আটকে যাওয়ায় ক্ষত হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর পাখিটিকে ছেড়ে দেন তিনি।

স্থানীয় এক তরুণী বলেন, ‘‘অসহায় বকটি ছটফট করছিল। সাঁতার জানি না। তাই কষ্ট হলেও কিছুই করতে পারছিলাম না। পাখিটিকে বাঁচানোর জন্য চন্দনদাকে ধন্যবাদ।’’

চুঁচুড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডের পুকুরগুলিতে ওই জালের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। একই অবস্থা চন্দননগর, চাঁপদানি, শ্রীরামপুরের মতো শহরেও। এমনকি, ব্যান্ডেল, দেবানন্দপুর-সহ কিছু এলাকায় আম, জাম, লিচু গাছও ঘেরা হচ্ছে ‘ফাঁদিজালে’। সেখানেও নানা ধরনের পাখি এসে আটকে যাচ্ছে। মৃত্যুও হচ্ছে বলে পরিবেশকর্মীদের দাবি। তাঁরা জানান, ওড়ার সময় নাইলনের ওই জালগুলি পাখির নজরে পড়ে না। তাই শিকারের জন্য পুকুরের দিকে দ্রুত গতিতে নেমে আসা পাখির পা জালে আটকায়। বাঁচার জন্য ছটফট করতেই বিশেষ ভাবে তৈরি জালগুলিতে ফাঁস পড়ে যায়। কেউ না বাঁচালে সেখানেই ওই পাখির মৃত্যু অনিবার্য। গাছের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয় পাখিদের।

শহরাঞ্চলে ওই জালের ব্যবহার বৃদ্ধির কথা মানছেন বন দফতরের কর্তারাও। তাঁদের একজনের কথায়, "ফাঁদিজালে কোনও পাখি আটকে পড়েছে খবর পেলে দফতরের কর্মীরা গিয়ে উদ্ধার করেন। তবে, ওই জালের ব্যবহার আটকাতে সরকারি সব স্তর থেকেই সচেতনতামূলক প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এ ক্ষেত্রে সে ভাবে অভিযোগ হয় না। তাই নজর এড়িয়ে যায়। তবে সচেতনতার বিষয়ে বন দফতর জানালে নিশ্চয়ই ভেবে দেখা হবে।

পাখিপ্রেমী চন্দন জানান, পশুপাখির উপর নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন (প্রিভেনশন অব অ্যানিমেল ক্রুয়েলটি অ্যাক্ট ১৯৬০) রয়েছে। অথচ, এ ক্ষেত্রে সেই আইন কোনও ভাবেই প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে, পুকুরের উপর কিংবা গাছে জাল বিছানোর্ বহর বেড়ে চলেছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগেও মূলত গ্রামীণ এলাকায় গিয়ে ফাঁদিজালে আটকে পড়া পাখিদের উদ্ধার করতাম। কিন্তু এখন শহরাঞ্চলের পুকুরগুলিতেও এই জাল পাতা শুরু হয়েছে। সঠিক সময়ে খবর না পেলে জালে আটকেই পাখিগুলি মারা যাচ্ছে।’’

দেবানন্দপুরের আর এক পাখিপ্রেমী অনিরুদ্ধ মণ্ডল বলেন, ‘‘পুকুরের কারবারিরা ভাবছেন, বক-পানকৌড়ির মতো পাখিরা সব মাছ খেয়ে নেবে। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু পাখিরা তো বাস্তুতন্ত্রেরই অঙ্গ। প্রশাসনের এটা দেখা উচিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cruelty on Animals Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE