Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
drainage system

খালের দু’পাশে দখলদারদের যথেচ্ছাচারেই ভাসতে হয় বর্ষায়

পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, তা মানছেন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি কল্যাণ ঘোষ থেকে হাওড়া পুরসভার কর্তারা।

বেআইনি নির্মাণের জেরে অবরুদ্ধ বালিটিকুরি খাল।

বেআইনি নির্মাণের জেরে অবরুদ্ধ বালিটিকুরি খাল। নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২২ ০৬:৪৮
Share: Save:

দেবাশিস দাশ

সলপের কাছে পশ্চিম কলকাতা উপনগরী তৈরি হওয়ার সময়েই ‘চুরি’ হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার অন্যতম নিকাশি খালের একটি বড় অংশ। এর পরে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা ওই খালের দু’পাশের বেশ কিছুটা অংশ যথেচ্ছ ভাবে বুজিয়ে গড়ে উঠেছে কল-কারখানা, এমনকি বসত বাড়িও। যার জেরে ৪০ ফুট চওড়া খাল এখন মেরেকেটে নেমে এসেছে ১৫-২০ ফুটে। শুধু তা-ই নয়, খালের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন নিকাশি নালা পাঁচিল তুলে বন্ধ করে দিয়ে তার উপরে গড়ে উঠেছে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ। সেই সঙ্গেই অভিযোগ, খালের আশপাশের ঝিল বুজিয়ে দিয়ে সেখানেও বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। গোটা ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসকদলেরই নেতাদের একাংশের দিকে। অভিযোগ, ‘কাটমানি’র লোভে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাকে রুদ্ধ করে দিয়ে এমন আত্মঘাতী কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে হাওড়ার অন্যতম প্রধান নিকাশি নালা ড্রেনেজ চ্যানেল লাগোয়া বালিটিকুরি খালের দু’পাশে।

গত বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পরে টানা বৃষ্টির জেরে ভেসে গিয়েছিল ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন বালির নিশ্চিন্দা, আনন্দনগর, লিলুয়ার জয়পুর, চামরাইল, ঘুঘুপাড়া এবং হাওড়া পুরসভার ৫০ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। সে বারই প্রথম কোমর সমান জলের তলায় চলে গিয়েছিল জয়পুর সংলগ্ন জাতীয় সড়ক। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যান চলাচল। কোথাও কোথাও সেই জল নামতে মাসাধিক কাল সময় লেগেছিল। নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন হাওড়া পুরসভা ও বালি-লিলুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার লক্ষাধিক বাসিন্দা।

কিন্তু কী এমন ঘটেছিল, যার জন্য এই অবস্থা? এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ও ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গিয়েছে, তা হল: প্রথমত, সলপ মোড়ের কাছে পশ্চিম হাওড়া উপনগরী হওয়ার সময়ে হাওড়া ড্রেনেজ চ্যানেলে মেশার আগে বালির নিশ্চিন্দা পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা খালটির একটি বড় অংশ পাঁচিল তুলে দখল করে নেওয়া হয়েছে। যার ফলে খালটি আগের তুলনায় অনেকটাই সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, গত এক দশক ধরে ওই খালের দু’পাশের অংশ অবৈধ ভাবে বুজিয়ে একের পর এক বসতবাড়ি, কারখানা, ক্লাব ও বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তৃতীয়ত, খালের দু’পাশে থাকা কারখানাগুলি যথেচ্ছ ভাবে মাটি ফেলে তার উপরে কংক্রিটের কালভার্ট তৈরি করেছে। চতুর্থত, দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে খালটির সংস্কার না হওয়ায় সেটির নাব্যতা কমে গিয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই দু’দিকের এলাকা ভেসে যায়।

এলাকার বাসিন্দা সমরেশ জানা বললেন, ‘‘এলাকার প্রভাবশালী নেতারা কাটমানির লোভে কারখানার মালিক ও জবরদখলকারীদের দিয়ে মাটি ফেলে খালটি বুজিয়ে ফেলেছেন। জবরদখল তুলে দিয়ে এই খালের সংস্কার না হলে আমরা বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ব।’’

শুধু খাল নয়, ওই এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, অনেক বড় বড় নর্দমাও দখল হয়ে গিয়েছে। পাঁচিল তুলে সেগুলি বন্ধ করে দিয়ে তার উপরে তৈরি করা হয়েছে বহুতল। ফলে নিকাশির জল বেরোতে পারছে না। বৃষ্টি হলেই ভেসে যাচ্ছে গোটা এলাকা।

পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, তা মানছেন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি কল্যাণ ঘোষ থেকে হাওড়া পুরসভার কর্তারা। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘এই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে খাল বা নিকাশির সংস্কার হয়নি। যার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ডোমজুড়ে জল দাঁড়িয়ে যায়। আমি বর্তমান সেচমন্ত্রীকে বলায় তিনি খাল সংস্কারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’

ডোমজুড়ের বিধায়ক জানান, খালের ধার থেকে জবরদখলকারীদের সরে যেতে এবং কারখানাগুলির নিচু কালভার্ট উঁচু করতে দেড় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। কারণ, তাঁদের লক্ষ্য, বর্ষার আগেই খাল সংস্কারের কাজ শেষ করা।

অন্য বিষয়গুলি:

drainage system Canal Balitikuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE