আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
দেড় মাস ধরে চর্মরোগের চিকিৎসক নেই। একমাত্র চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে আর নিয়োগ হয়নি। রোগীদের আত্মীয়দের অভিযোগ, এক্স-রে যন্ত্র প্রায়ই বিকল থাকে বা ফিল্ম থাকে না। সিটি স্ক্যান করাতে হয় বাইরে থেকে। ক্যাথিটারের মতো সামগ্রী তো বটেই, অনেক ওষুধও রোগীর পরিজনকে বাইরে থেকে কিনতে হয়। এ ভাবেই চলছে আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল।
পরিষেবার ঘাটতি নিয়ে বিক্ষোভ, চিকিৎসক নিগ্রহ বা পাল্টা রোগীর আত্মীয়দের উপর স্বাস্থ্যকর্মীদের হামলার নজিরও কম নেই। কোন পরিষেবাটি মহকুমা হাসপাতলের ভবনে মিলবে আর কোনটির পরিষেবা একই চৌগদ্দিতে থাকা সুপার স্পেশালিটি হাসাপতালে হবে, তা নিয়ে রোগীদের বিস্তর ভোগান্তি পোয়াতে হয়।
যেমন, সাধারণ জরুরি বিভাগটি মহকুমা হাসপাতালে। আবার বহির্বিভাগ কিছু মহকুমা হাসপাতলে, কিছু সুপার স্পেশালিটিতে। প্যাথলজির কিছু বিভাগও এ রকম ভাগ করা। এক্স-রে রয়ে গিয়েছে মহকুমা হাসপাতাল ভবনে। দু’টি ভবনে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের আনাগোনা নিয়ে ব্যাপক অশান্তি লেগেই থাকে। চিকিৎসার সমস্ত বহির্বিভাগের জন্য টিকিট কাটতে হয় মহকুমা হাসপাতাল ভবনে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটির পরিষেবা মহকুমা হাসপাতাল স্তরেই রয়ে গিয়েছে। উল্টে দুই ভবনে ছোটাছুটিতে হয়রানি বেড়েছে। সরঞ্জামের অভাবের অজুহাত দিয়ে জরুরি অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দেওয়া হয়। ছুটতে হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কিংবা কলকাতার হাসপাতালে। তবে মানুষের আশা-ভরসা, এ বার আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজটি চালু হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার সুদিন ফিরবে।
পরিষেবার কোনও ঘাটতি থাকবে না জানিয়ে এখনও পর্যন্ত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরিচালনের দায়িত্বে থাকা মহকুমা হাসপাতাল সুপার সত্যজিৎ সরকার বলেন, “সিটি স্ক্যান আমাদের স্তরে হচ্ছে না। তবে ডিজিটাল এক্স-রে আছে। সেটি খুব শীঘ্র চালু হবে। মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালটিতে কোনও সমস্যাই থাকবে না।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে আর্থিকঘাটতিতে কিছুটা বেহাল পরিস্থিতি চলছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পেতে অসুবিধা হচ্ছে।
মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে ৬০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকায় তৈরি পাঁচতলা ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি চালু হয়েছে ২০১৭ সালের জুন মাসে। ওই একই চত্বরে ১০০ আসন বিশিষ্ট নবনির্মিত ‘প্রফুল্লচন্দ্র সেন গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজটি এ বছরই চালু করার কথা ঘোষণা করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কলেজের অধ্যক্ষ রামপ্রসাদ রায় বলেন, “পড়ুয়া ভর্তি হয়ে গিয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। যাবতীয় চিকিৎসা পরিকাঠামো আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ হবে।”
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল তথা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল শুধু মহকুমার ছ’টি ব্লকের মানুষই নন। পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর এবং হাওড়া জেলার সংলগ্ন গ্রামগুলির রোগীদেরও ভিড় হয়।
হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষের অভিযোগ, “এই সরকারের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। দুর্নীতির লক্ষ্যে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে বিধায়ক থাকার কথা থাকলেও নিয়ম বদলে আমাদের বিধায়ককে রাখা হয়নি।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নামেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। কোনও মতে মহকুমা হাসপাতাল স্তরের পরিষেবাই মিলছে। মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে আশা আছে।”
হাসাপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “সিটি স্ক্যানটা জরুরি। আমরা সুপারিশ করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy