দুর্গতি: রাস্তা ডুবে যাওয়ায় এ ভাবেই পারাপার গোঘাটের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের সাতবেড়িয়া এলাকায় । ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
ঠেকানো গেল না প্লাবন। সেচ দফতরের আশঙ্কা সত্যি করে শুক্রবার সকালে আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদের জলস্তর টপকে গেল প্রাথমিক বিপদসীমা। যার জেরে শহরের ১৯টির মধ্যে ৮টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হল। বাঁধ উপচে এবং বাঁধের ফুটো (ঘোগ) দিয়ে জল ঢুকে একই দশা হল আরামবাগ, খানাকুল এবং গোঘাটের মোট পাঁচটি ব্লকের অন্তত ৯০টি গ্রামের। জলবন্দি হলেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। দুর্গতদের সরানোর কাজ শুরু করে প্রশাসন।
দুপুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন জেলাশাসক দীপপ্রিয়া পি। তিনি খানাকুল-১ ব্লকের নরেন্দ্রচক, ময়াল-ইছাপুর, ঠাকুরানিচক-সহ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “দু’তিনটি জায়গা দিয়ে জল ঢুকে বেশ কিছু এলাকা ডুবেছে। আরামবাগ পুরসভা এবং ব্লক এলাকার ৩৫০ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় আনা হয়েছে। খানাকুলেরও প্রায় ৪০০-৫০০ মানুষকে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। জলবন্দি এলাকাগুলি সংশ্লষ্ট ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতগুলি নজর রাখছে। প্রয়োজনে আরও অনেককে নিরাপদ জায়গায় সরানো হবে।”
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগে দ্বারকেশ্বরের প্রাথমিক বিপদসীমা ১৬.৬১ মিটার, বিপদসীমা ১৭.২২ মিটার এবং চরম বিপদসীমা ১৭.৮৩ মিটার। এ দিন সকালে প্রাথমিক বিপদসীমা টপকে দ্বারকেশ্বরের জলস্তর দাঁড়ায় ১৭.০৬ মিটারে। বিকেল ৩টা নাগাদ জলস্তর কিছুটা কমে হয় ১৬.৯৪ মিটার।
সেচ দফতরের মহকুমার সহকারী বাস্তুকার শ্রীকান্ত পাল বলেন, “কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ উপচে এবং বাঁধের ফুটো দিয়ে জল ঢুকে এলাকা
প্লাবিত হয়েছে।”
ক’দিনের টানা বৃষ্টির জেরে ‘বাঁকুড়া ক্যাচমেন্ট বেসিন’ (ঝাড়খণ্ড ও বাঁকুড়ার বৃষ্টির জমা জল) থেকে আসা জলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দ্বারকেশ্বর ফুলে ওঠে। ওইদিন বিকেলে ফের প্রায় ৪৯ হাজার কিউসেক হারে জল আসতে থাকে। তার জেরেই শুক্রবার সকালে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় দ্বারকেশ্বর। আরামবাগ পুর এলাকার ২ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটাই জলমগ্ন হয়। আংশিক জলমগ্ন হয়েছে ১ নম্বর-সহ আরও
৬টি ওয়ার্ড।
পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দী বলেন, “পুর এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। তিনটি ত্রাণ শিবির করে তাঁদের খাবারেরও ব্যবস্থা
করা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, আরামবাগ ব্লকের সালেপুর-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকার পার্বতীচক, সালেপুর পশ্চিমপাড়ার মতো প্রায় ১৫টি গ্রামের অন্তত ৪০০ মানুষকে সরানো হয়েছে। সন্ধ্যায় মহকুমাশাসক (আরামবাগ) নৃপেন্দ্র সিংহ-সহ প্রশাসনের কর্তারা বিপর্যয় মোকাবিলা দল নিয়ে সালেপুর পশ্চিমপাড়ায় যান। খানাকুলের দু’টি ব্লকের মধ্যে বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরপুর-১ ও ২, ঘোষপুর এবং ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েত এলাকা। ঠাকুরানিচকের উপপ্রধান শীতল মণ্ডল বলেন, ‘‘চার হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দি হয়ে আছেন। তাঁদের
সরানো হচ্ছে।”
গোঘাটের দু’টি ব্লকে বাঁধ উপটে জল তো ঢুকেইছে, আমোদর নদ, তারাজুলি খাল এবং কংসাবতী খাল দিয়েও হুহু করে জল ঢোকে। দুই ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টি জলমগ্ন হয়। ভাদুর পঞ্চায়েতের ভঞ্জপাড়া বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে ১৫টি পরিবারকে সকালেই সরানো হয়। সাতবেড়িয়া, মান্দারণ, নকুন্ডা এবং ভাদুর ঘসিমঘাটায় এক কোমর জল হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy