প্রতীকী ছবি।
ন’বছর আগে আমতার মুক্তিরচকের একই পরিবারের দুই মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবার সেই মামলায় আট জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আমতা আদালত। শনিবার তাঁদের সাজা ঘোষণা হল। দোষীদের ২০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক।
আমতা আদালতের বিচারক রোহন সিন্হা যে আট জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন, তাঁরা হলেন— বরুণ মাখাল, বংশী গায়েন, নব গায়েন, সৈকত মণ্ডল, গৌতম মাখাল, সুকান্ত পাত্র, গৌরহরি মাখাল এবং শঙ্কর মাখাল। গণধর্ষণের ঘটনায় মোট ১০ জন অভিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে জগৎ মণ্ডল এবং রঞ্জিৎ মণ্ডলকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে আদালত। শনিবার আদালত সাজা ঘোষণা করার পর সরকারি আইনজীবী সিদ্ধার্থ মজুমদার জানান, ৩২৩ ধারা (অস্ত্র ছাড়া শারীরিক নিগ্রহ এবং মারধর) অনুযায়ী বিচারক দোষীদের এক বছরের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড, ৪৫০ ধারা (বেআইনি ভাবে প্রবেশ) অনুযায়ী সাত বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস কারাদণ্ড এবং ৩৭৬ ডি (গণধর্ষণ) ধারা অনুযায়ী ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। বিচারকের নির্দেশ, দোষীরা জরিমানার টাকা দিলে তা দুই নির্যাতিতার মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে।
গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। পুলিশ জানিয়েছে, সে দিন রাত ১২টা নাগাদ দোষীরা মুক্তিরচকের ওই বাড়ির পাঁচিলের দরজা ভেঙে ঢোকেন। সেই সময়ে সিপিএম সমর্থক ওই পরিবারের কোনও পুরুষ বাড়িতে ছিলেন না। এক মহিলা ও তাঁর জেঠশাশুড়িকে দোষীরা ধর্ষণ করে। দুই মহিলাকে শারীরিক নিগ্রহ এবং মারধরও করা হয়। এক মহিলার শিশুকন্যাকে দোষীরা আছাড় মেরে উঠোনে ফেলে দেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তারা তাণ্ডব চালান।
দুই মহিলা চিৎকার করলেও ভয়ে কোনও প্রতিবেশী আসেননি। বধূর শাশুড়ি কোনও মতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার টহলরত পুলিশকে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই দোষীরা চম্পট দেয়। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটানোর আগে দোষীরা রাস্তা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুলিশের পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গণ সংগঠনের প্রতিনিধিরাও আসেন। দুই মহিলাকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদিনের মধ্যে পুলিশ ১০ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। মামলার তদন্তকারী অফিসার হন আমতার তৎকালীন সিআই শুভাশিস চক্রবর্তী। তিনি ঘটনার ৮৭ দিনের মাথায় ধৃতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। আদালতের নির্দেশে দুই নিগৃহীতার বাড়ির সামনে বসে পুলিশ প্রহরা।
কিন্তু সরকারি আইনজীবী নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে চার্জ গঠন হওয়ার পরেও শুনানি শুরু হতে দেরি হয়। শেষ পর্যন্ত সরকারি আইনজীবী নিয়োগের পরে ২০১৪-র নভেম্বর মাস থেকে শুনানি শুরু হয়। এর মধ্যে চার বার বিচারক বদলি হন। শুনানি চলাকালীন ধৃতেরা জামিন পেলেও হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাঁরা মুক্তিরচকে ঢুকতে পারতেন না। মামলাটিতে ৪৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। যাঁদের মধ্যে ছিলেন পুলিশের বেশ কয়েক জন এবং আমতা ও উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের অন্তত ১১ চিকিৎসক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy