Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
এক দিনে তিন নাবালিকার বিয়ে রুখল প্রশাসন
Child Marriage

‘বাড়িতে রাখলে ওরা জোর করে বিয়ে দেবে’, বলল নাবালিকা

তিন জনেরই বয়স ১৫। প্রত্যেকেই স্থানীয় স্কুলের ছাত্রী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৫:৩০
Share: Save:

ঘটনা ১: গত রবিবার দুপুরে হাওড়ার জয়পুরের একটি গ্রামের বাড়িতে চলছিল এক নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড়। আচমকাই সেখানে হানা দেয় জেলা চাইল্ড লাইনের সদস্য ও প্রশাসনের কর্তারা। চাইল্ড লাইনের এক সদস্যের হাত ধরে বছর পনেরোর ওই কিশোরীর আর্তি, ‘‘দাদা আমি পড়তে চাই। আমাকে নিয়ে যাও। এখানে রেখে গেলে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে ওরা।’’

ঘটনা ২: ওই একই সময়ে শ্যামপুর ২ ব্লকের একটি গ্রামে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আর এক বালিকার। সেখানে চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা পৌঁছে বিয়ে ভেঙে দেন। হোমে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে বেঁকে বসে সে। কার্যত হুমকির সুরে সকলকে জানায়, হোমে নিয়ে যাওয়া হলে আত্মঘাতী হবে সে। মেয়েটি এ-ও জানায়, সে স্বেচ্ছায় নিজের পছন্দের যুবককে বিয়ে করছে। প্রশাসন অবশ্য বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। পরিবারটি আপাতত প্রশাসনের নজরবন্দি।

ঘটনা ৩: পাঁচলা ব্লকের একটি গ্রাম। রবিবার সেই গ্রামের একটি বাড়িতে চলছিল এক নাবালিকার বিয়ের প্রস্তুতি। খবর পেয়ে সেখানে যায় প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন। বিয়ে বন্ধ করে মেয়েটিকে লিলুয়া হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। নাবালিকা জানায়, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সে এখন পড়তে চায়।

চবিবশ ঘণ্টায় তিন নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করল হাওড়া জেলা প্রশাসন ও জেলা চাইল্ড লাইন। জেলা চাইল্ড লাইন-এর কো-অর্ডিনেটর বৈশাখী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’টি মেয়ের বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তৃতীয় জন স্বেচ্ছায় বিয়ে করছিল। তিন জনেরই বয়স ১৫। প্রত্যেকেই স্থানীয় স্কুলের ছাত্রী। করোনা-আবহে স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের আর পড়াশোনা হবে না বলে ধরে নিয়েছিল তাদের পরিবার।’’

গত বছর করোনা লকডাউন এবং করোনা-মোকাবিলায় সম্প্রতি জারি হওয়া বিধিনিষেধের সুযোগে ফের নাবালিকা বিবাহ বাড়ছে বলে মনে করছে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কর্মীদের একাংশ। হাওড়ায় এক দিনে তিন নাবালিকার বিয়ে রোখার ঘটনা সেই সন্দেহকেই উস্কে দিচ্ছে।

বৈশাখী বলেন, ‘‘যে তিন নাবালিকার বিয়ে রোখা হয়েছে, তাদের একজনের মা নেই। সে থাকে ঠাকুমার কাছে। তার বাবা নেশা করে পড়ে থাকে। মেয়েটি এই অবস্থার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। ঠাকুমা জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল মেয়েটির। আমরা ওকে লিলুয়া হোমে নিয়ে এসেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘একটি মেয়ে আমাদের এক সদস্যের হাত ধরে অনুরোধ করে বলে, ‘আমাকে নিয়ে যাও। এখানে রেখে গেলে ওরা বিয়ে দিয়ে দেবে। মেয়েটির আরও দুই ভাই-বোন আছে। পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। ওর বাবা-মা আমাদের বলেছেন, আমরা নিজেরাই খেতে পাচ্ছি না, মেয়েকে কী খাওয়াব? তাই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy