মাটির বাড়িতে শিবম হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। রাতে ভরসা হ্যারিকেন বা লম্ফ। মাটির দেওয়াল, টালির চালের ঘর। বৃষ্টি হলেই জল পড়ে। মেঝেতে হাঁড়ি বা বালতি পাততে হয়। স্মার্টফোন নেই। ফলে, অনলাইন ক্লাস করার উপায় ছিল না। এহেন দিন আনি দিন খাই পরিবারের শিবম হেমব্রম মাধ্যমিকে ৬২৫ নম্বর পেয়ে চিন্তা বাড়িয়েছে বাবা-মায়ের। জ্যৈষ্ঠের তপ্ত দুপুরে পান্ডুয়ার অড়লডাঙায় ঘরের দাওয়ায় বসে গলদঘর্ম বাবা সোমনাথ হেমব্রম ভাবেন, কী ভাবে ছেলের পড়ার খরচ চালাবেন?
সোমনাথ এবং তাঁর স্ত্রী মমতা দিনমজুর। জবকার্ড থাকলেও এখন ১০০ দিনের কাজ মিলছে না। দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁদের সংসার। রামেশ্বরপুর শ্রীকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল শিবম। তার ইচ্ছে, বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে। স্বপ্ন— ইঞ্জিনিয়ার হবে।
নিজের পড়া চালানোর উপায় ভেবেছে ছেলেটি। সে এবং তার সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ভাই মাঝেমধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করতে যায়। শিবমের কথায়, ‘‘বাবার সামর্থ্য নেই। ভাবছি, এ বার থেকে নিয়মিত মাঠে কাজ করব। তাতে পড়ার খরচ আসবে।’’ সে জানায়, এত দিন স্কুলের শিক্ষকরা পড়াশোনায় যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। বই কিনে দিয়েছেন।
স্মার্টফোন না থাকায় শিবম করোনাকালে অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি। গৃহশিক্ষকও ছিলেন না কেউ। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় বিকেলের পরে পড়ার সুযোগ হত না। এত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে হাসিমুখে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে সে। ভোরের আলো ফুটতেই পড়তে বসেছে। সোমনাথ বলেন, ‘‘বড় ছেলেকেআর পড়াতে পারব কি না, জানিনা। এত দিন গৃহশিক্ষক ছাড়াইচলেছে। এ বার বড় ক্লাসে তো দিতে হবে। স্কুলে ভর্তি, বইখাতা কেনা— অনেক খরচ। কোথায় পাব! সংসারই চলছে না। জমানো টাকাও নেই। বাংলা আবাসের ঘর পর্যন্ত পাইনি। ভাঙা ঘরেই ছেলে এতটা এগোল। এ বার না থামতে হয়!’’
তিনি জানান, বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল। টিভি, পাখা ছিল না। জ্বলত দু’টি বাল্ব। বছর আটেক আগে এক বার ১০ হাজার টাকা বিল (৩ মাসে) এসেছিল। অনেক চেষ্টা করেও ওই টাকা জোগাড় করতে পারেনি হেমব্রম পরিবার। বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় বিদ্যুৎ দফতর। অবশ্য অন্ধকার জয় করে সোমনাথের জীর্ণ ঘরে আলো ফুটিয়েছে ছেলে শিবম।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy