পুরস্কার নিচ্ছেন বুবাই বাগ। নিজস্ব চিত্র।
পোলিয়োয় ছোটবেলা থেকেই অকেজো দুই পা। হাওড়ার বাগনানের বুবাই বাগের পথচলা শুরু হাঁটুতে ভর করে। কখনও মায়ের কোলে চড়ে। ক্রমে পেরিয়েছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। বর্তমানে বাগনান কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক তথা বিভাগীয় প্রধান। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের নিয়ে বই লিখেছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।
তাঁর এ হেন উত্তরণ অনেকের কাছেই উদাহরণ। তাঁর শিক্ষা সংক্রান্ত যাত্রা এবং সমাজকল্যাণমূলক ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে সোমবার অর্থাৎ ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে’র আগের দিন রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর তাঁকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং ক্রিয়েটিভ অ্যাডাল্ট’ (অসামান্য সৃজনশীল ব্যক্তি) হিসাবে সম্মানিত করল। কলকাতার রোটারি সদনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দফতরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ তাঁর হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেন।
বুবাইয়ের বাবা দিনমজুর ছিলেন। মা (বছর তিনেক আগে প্রয়াত) কলম তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি বুবাইয়ের প্রতিপক্ষ ছিল সংসারের দারিদ্রও। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মনে হয়েছিল, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বাংলা ভাষায় বই বিশেষ নেই। শুরু করেন প্রতিবন্ধী মানুষের উপরে গবেষণা। ১৪ বছরের গবেষণার রসদে লিখেছেন বই। এই বছরেই প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রতিবন্ধী মানুষ রাষ্ট্রে সমাজে ও ইতিহাসে’ নামে সেই গ্রন্থ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে গিয়েছেন নানা জায়গায়। দুঃস্থ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পাশে দাঁড়াতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়েছেন।
বুবাইয়ের পড়াশোনা শুরু বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে, উলুবেড়িয়ার জগৎপুর আনন্দ ভবন প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়ে। বুবাই বলেন, ‘‘নিজেকে প্রতিবন্ধী ভাবতাম না। অন্যদের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। অভাবের সংসারে এক দিন মাথা তুলে দাঁড়াব, এটাই ছিল জীবনের মূল অঙ্গীকার।’’ তাঁর এক সময়ের শিক্ষক অজয় দাসের বক্তব্য, শারীরিক অক্ষমতাকে হারিয়ে আর পাঁচ জনের মতোই সব কিছু যে করা যায় এবং সফল হওয়া যায়, বুবাই তার উদাহরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy