চন্দননগরের সাধুচরণ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। নিজস্ব চিত্র।
গত ১৫ বছর ধরে এই স্কুলের দুই শিক্ষিকা প্রতিদিন স্কুলে আসছেন। ক্লাসঘরের দরজা-জানলা খুলে নিজেরাই বইপত্র পড়ে বাড়ি চলে যান। কারণ, স্কুলের উচ্চ প্রাথমিক স্তরে কোনওপড়ুয়া নেই।
স্কুলটির প্রাথমিক স্তরের অবস্থাও তথৈবচ। রয়েছে মাত্র পাঁচ পড়ুয়া। এখানকার তিন শিক্ষকের আশঙ্কা, পড়ুয়ার এই সংখ্যা যে কোন সময় শূন্য হয়ে যেতে পারে।
এমনই অবস্থা চন্দননগরের রথের সড়কের কাছে সাধুচরণ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের।
শহরের বাগবাজার এলাকায় ১৯৪১ সালে পথচলা শুরু স্কুলটির। ১৯৬৪ সালে মেলে সরকারি অনুমোদন। এরপর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের রথের সড়কের কাছে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরি হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে স্কুলের নীচের তলায় প্রাথমিক ও দোতলায় উচ্চ প্রাথমিক (বালিকা) বিভাগের পঠনপাঠন শুরু হয়। সেই সময় অনেক পড়ুয়াও ছিল স্কুলটিতে। শিক্ষক, খেলার মাঠ, পরিচ্ছন্ন শ্রেণিকক্ষ, খাওয়ার পৃথক ঘর—সবই ব্যবস্থা রয়েছে স্কুলটিতে। তারপরও ২০০১ সাল থেকে স্কুলে পড়ুয়া কমতে শুরু করে। আর ২০০৭ সাল থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে কোনও পড়ুয়া নেই।
কেন এমন হাল?
বিস্তর অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। এক অভিভাবিকার কথায়, ‘‘এখন আফশোস করে কী হবে? আমার মেয়ে ওই স্কুলে যেত। শিক্ষিকারা মিড ডে মিল খাইয়ে মেয়েদের বাড়ি পাঠিয়ে দিত। পড়াশোনা হতই না। এমন চলতে পারে?’’ অন্য এক অভিভাবকের ক্ষোভ, ‘‘মেয়েকে বাংলা মাধ্যমে পড়াতে চাই না। একটু বেশি খরচ করে কাছে একটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠাচ্ছি। সেখানে ভাল পড়াশোনাও হয়।’’ অন্য আর এক জনের দাবি, ‘‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল হলে সমস্যার। নবম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে সমস্যা হয়। তাই একটা মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছি।’’
পড়ুয়া না থাকা নিয়ে বিব্রত শিক্ষিকরাও। উচ্চ প্রাথমিক বিভাগে ১৯৯৭ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও ২০০৩ সালে সহ শিক্ষিকা যোগ দেন। তাঁরাও বদলির উপায় খুঁজছেন। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘পড়াতে না পারায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। নিজেদের বেতন থেকে স্কুলের বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়।’’ স্কুলটি মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হলে সমস্যা মিটতে পারে বলে আশাবাদী তাঁরা।
স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের পার্শ্বশিক্ষক তথা স্থানীয় কাউন্সিলর অভিজিৎ সেন বলেন, ‘‘স্কুলে সব রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পড়ুয়া বাড়াতে শিক্ষকরা বছরভর চেষ্টা চালান। ফের এলাকা ঘুরে অভিযান শুরু করা হবে। স্কুলছুটদেরও ফেরানোর চেষ্টা চলছে।’’
আর জেলার ভারপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তপনকুমার বসু বলেন, ‘‘এখনও স্কুলটির খবর নিয়ে উঠতে পারিনি। খোঁজ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy