হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধাকে ছেলের হাতে তুলে দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-সাধারণ’ সেই সুকুমার। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা। পুলিশকর্মী সুকুমার উপাধ্যায়ের চেষ্টায় ওই বৃদ্ধাকে খুঁজে পেল তার পরিবার। সুকুমার বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের ক্ষেত্রে পরিচিত নাম। তাঁর এই কাজকে স্বীকৃতি দিতে সুকুমারকে আগেই সম্মানিত করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সংস্থার বিচারে আগেই ‘অ-সাধারণ’ হয়েছিলেন সুকুমার। সমাজের নানা ক্ষেত্রে কৃতীদের সম্মান জানাতে আনন্দবাজার অনলাইন প্রতি বছরই ‘বছরের বেস্ট’ পুরস্কার দিয়ে থাকে। ২০২২ সালে অন্য কৃতীদের সঙ্গে এই পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল সুকুমারকেও।
গুড়াপ থানার খরুয়া গ্রামের বাসিন্দা খেদিবালা ভূমিজের বয়স প্রায় নব্বই। বাড়ি থেকে একদিন হঠাৎ বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। মা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর ছেলে সুরেন কয়েক দিন খোঁজাখুঁজি করেও কোনও সন্ধান পাননি। হুগলির চুঁচুড়া শহরের ঘড়ির মোড় কিংবা আদালতের ধারে ভবঘুরের মতো ঘোরাঘুরি করতেন ওই বৃদ্ধা। যে যা দিত, তাই খেতেন। গাছতলাতেই রাত কাটত তাঁর। দিন তিনেক আগে সন্ধ্যায় চুঁচুড়ার আমড়াতলা এলাকার একটি আবাসনে ঢুকে গাছের পাতা কুড়িয়ে জড়ো করছিলেন। আবাসনের বাসিন্দা সুকুমার ওই বৃদ্ধাকে দেখতে পান। বৃদ্ধাকে ডেকে নামধাম জিজ্ঞাসাও করেন। বৃদ্ধার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন ছিল সে সময়, পোশাকও ছিল অপরিষ্কার।
আবাসনের অন্য বাসিন্দারা বৃদ্ধাকে খাবার দেন ।রাতে চাদর দিয়ে থাকা এবং শোওয়ার বন্দোবস্ত করেন। গতকাল তাকে ভাল করে সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে দেওয়া হয়। বৃদ্ধার বাড়ি কোথায়, পরিবারে কে কে আছেন, তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কখনও বলে বাঁকুড়া, কখনও বলেন হুগলির বৈঁচি। সুকুমার বৃদ্ধার ছবি তুলে ফেসবুকে দেন এবং তাঁর পরিবারের সন্ধান পেলে যোগাযোগ করতে বলেন। হুগলি জেলারই ধনিয়াখালির এক ব্যক্তি, যিনি চুঁচুড়া আদালতে কাজ করেন, তিনি ফেসবুকে বৃদ্ধার ছবি দেখে চিনতে পারেন। সুকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৃদ্ধার বাড়ির ঠিকানা দেন। সুকুমার গুড়াপ থানায় তাঁর এক সহকর্মীকে বৃদ্ধার বাড়ি এবং পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেন। সন্ধান মেলে বৃদ্ধার ছেলে সুরেনের। তাঁর মাকে পাওয়া গিয়েছে, এই খবর দেওয়া হয় সুরেনকে। শনিবার চুঁচুড়ার ওই আবাসন থেকে মাকে নিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরে যান সুরেন। জানান, আবাসনের বাসিন্দারা তাঁর মায়ের যে ভাবে যত্ন করেছে, তার জন্য তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। যাওয়ার আগে বৃদ্ধাকে কিছু টাকা, খাবার ও জামা কাপড় দেওয়া হয়। সুকুমার এবং তাঁর সহকর্মী বরুন ঘোষ-সহ আবাসনের মানুষদের ব্যবহারে আপ্লুত বৃদ্ধাও। ছেলেকে অনেক দিন পর দেখে তাঁর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, “আমার ছেলে।” মাকে পেয়ে সুরেনের তখন চোখের কোণ চিক চিক করছে।
পুলিশকর্মী বরুণ ঘোষের মেয়ে বর্ণালী ঘোষ বলেন, “ঠাকুমা আমাদের কাছে ছিলেন। আমরা সাধ্যমতো তাঁর যত্ন করেছি। এখন তিনি ছেলের কাছে ফিরে যাচ্ছেন দেখে খুব ভাল লাগছে।” সুকুমার বলেন, “ফেসবুকে বৃদ্ধার ছবি দেওয়ার পর সুকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে চুঁচুড়া আদালতে কাজ করা আমার এক পরিচিত আমাকে জানান যে, গুড়াপে ওই বৃদ্ধার বাড়ি। তার পরই আমি গুড়াপ থানায় যোগাযোগ করি এবং তাঁর ছেলের সন্ধান পাই। খুব ভাল লাগছে একজন পথভোলা বৃদ্ধাকে বাড়ি পাঠাতে পেরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy