তৈয়ব আলি খুনে ধৃত আকাশ (বাঁ দিকে) এবং সিকন্দর (ডানদিকে)। — নিজস্ব চিত্র। — নিজস্ব চিত্র।
সম্পত্তির কারণেই যে হাওড়ার শিবপুরের ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পর তা মোটামুটি পরিষ্কার তদন্তকারীদের কাছে। মৃত শেখ তৈয়ব আলি (৫৮)-র পালিত পুত্র আকাশ আফ্রিদি ও তাঁর সহযোগী সিকন্দর শেখকে গ্রেফতারের পর জেরা করে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে। শিবপুর থানার পুলিশ জানতে পেরেছে, আকাশ আগেও বাবার লক্ষ লক্ষ টাকা চুরি করেছে। শুধু তাই নয়, অপহরণের নাটক ফেঁদেও তৈয়বের থেকে মোটা টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু এত টাকা দিয়ে কী করতেন আকাশ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারীরা জেনেছেন, পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন তিনি।
আকাশের ব্যাপারে পরিবারের লোকজন ও পড়শিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বহু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পারিবারিক সূত্রে খবর, প্রথম সন্তান মারা যাওয়ার পর আকাশকে দত্তক নিয়েছিলেন তৈয়ব। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ছ’বছর। ছোট থেকেই পড়াশোনায় মন ছিল না আকাশের। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়া ছেড়ে দেন তিনি। তার পর বাবার ব্যবসার কাজকর্মই করত।
তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় ঢুকে পড়ায় কম বয়স থেকেই আকাশের হাতে টাকা আসতে শুরু করে। যার জেরে ছোট থেকেই বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যত দিন গিয়েছে, ততই তাঁর চাহিদা বেড়েছে। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে নিয়মিত নাইট ক্লাবে যাতায়াত ছিল তাঁর। তার প্রমাণ আকাশ ফেসবুক থেকেও মিলেছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বন্ধুদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই বিদেশে ঘুরতে চলে যেতেন আকাশ। প্রায়ই দামি দামি বাইক কিনতেন এবং কিছু দিন যেতে না-যেতেই তা বদলে ফেলতেন। ঘন ঘন মোবাইল ফোন বদলে ফেলতেন তিনি। সম্প্রতি আকাশের জীবনযাত্রা আরও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গিয়েছিল বলেই দাবি করেছেন পড়শিরা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চাহিদা মতো টাকা না পেলে পরিবারের লোকজনদের উপর চাপ সৃষ্টি করে চমকে-ধমকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করতেন আকাশ। এক বার ঘরের সিন্দুক ভেঙে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা এবং সোনায় গয়না চুরি করার অভিযোগও উঠেছে আকাশের বিরুদ্ধে।
এক আত্মীয়ের দাবি, সত্যিটা জানার পরেও সেই সময় আকাশকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন তৈয়ব। আরও এক বার অপহরণের নাটক করে বাবার কাছ থেকে আকাশ মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ওই আত্মীয়।
২০২০ সালে তৈয়বের স্ত্রী মারা যান। আত্মীয় এবং পড়শিদের অনুমান, আকাশের অত্যাচারেই স্ট্রোক হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। স্ত্রীর মৃত্যুর দু’বছর পর খুন হলেন তৈয়ব। শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ হাওড়ার শিবপুর থানার অন্তর্গত কাজিপাড়া এলাকায় নিজের ফ্ল্যাটে ঢোকার সময় খুন করা হয় তাঁকে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আচমকাই পিছন থেকে তাঁর মাথার পিছনে চপার দিয়ে আঘাত করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তৈয়বকে বাঁচানো যায়নি।
তদন্তকারীদের অনুমান, আকাশই পরিকল্পনা করে খুন করেছেন তৈয়বকে। নিজের হাতে অবশ্য খুন করেননি তিনি। পুলিশের দাবি, সিকন্দর নামে এক দুষ্কৃতীকে খুনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা সুপারী দিয়েছিলেন আকাশ।
আকাশ এবং সিকন্দরকে গ্রেফতার করে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনও পর্যন্ত যা তথ্য মিলেছে, তার থেকে পুলিশের একাংশের অনুমান, তৈয়বের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের ‘মাত্রাছাড়া’ চাহিদা পূরণ করতে পারছিলেন না আকাশ। তাই, কাজিপাড়ায় তৈয়বের জমিতে গাড়ির শো-রুম খুলে নিজের ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন তিনি। তৈয়ব তাতে সম্মতি না দেওয়ায় পালক পিতার প্রতি রাগ তো ছিলই। এর সঙ্গে বাজারে বিপুল পরিমাণ অঙ্কের দেনা শোধের চাপও ছিল। তদন্তকারীদের অন্য একটি অংশের অনুমান, আকাশকে দত্তক নেওয়ার পর তৈয়বের এক সন্তান হয়। সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন আকাশ। আবার তৈয়বের জিটি রোডের কাছে প্রায় দু’কোটি টাকার সম্পত্তির উপর তাঁর লোভও ছিল। এই ক্রোধ -ভয়-লোভ সব একত্রিত হয়ে আকাশ বাবাকে খুনের পরিকল্পনা করেছেন বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy