চুঁচুড়া থানার সামনে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ।
হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের ‘কুরুচিকর’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে পথে নামল বিজেপি। সোমবার চুঁচুড়া থানার সামনে বিজেপিকর্মীদের বিক্ষোভের জেরে উত্তেজনা তৈরি হয়। শাসকদলের বিধায়কের কুশপুতুল পোড়ানোকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপির আঠারো জন কর্মী-সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ। হাতাহাতির জেরে এক জন আহত হন বলেও দাবি গেরুয়া শিবিরের। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। পাল্টা শাসক শিবিরের বক্তব্য, বিধায়কের মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করে অকারণ নাটক করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার লকেটকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে অসিত মন্তব্য করেছিলেন, হুগলির সাংসদকে তিনি গলার লকেট থেকে পায়ের নূপুর করে ছেড়েছেন। শুক্রবার বিধায়কের ওই মন্তব্যের পাল্টা জবাবও দিয়েছেন লকেট। এর পর সোমবার অসিতের ওই মন্তব্যের বিরোধিতায় চুঁচুড়া থানায় স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপিকর্মীরা। থানার সামনে বসে বিধায়কের বিরুদ্ধে তাঁরা স্লোগান দেন। বিজেপির অভিযোগ, শুধু লকেট নন, গোটা নারী সমাজকেই অসম্মান করেছেন অসিত। সম্প্রতি হুগলি গার্লস স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে পোশাক নিয়ে আলোচনায় ছাত্রীদের সম্পর্কেও বিধায়ক ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেছেন বলে বিজেপির অভিযোগ। তার প্রতিবাদে বিজেপির মহিলা মোর্চা এবং যুব মোর্চা পিপুলপাতি থেকে চুঁচুড়া থানা পর্যন্ত মিছিলও করে।
গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, থানার সামনে বিধায়কের কুশপুতুল দাহ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় কুশপুতুল। তার পরেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। আটক করা হয় বিজেপি যুব মোর্চার জেলা সভাপতি রাজীব ঘরামি-সহ আঠারো জনকে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে আবার থানার সামনে বসে পড়েন বিজেপিকর্মীরা। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় স্বপন বিশ্বাস নামে তাদের এক কর্মী আহতও হয়েছেন। নাক কেটে যাওয়ায় তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে চুঁচুড়ার বিধায়ক মহিলাদের সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলছেন, সমাজ তা কখনওই গ্রহণ করে না। তারই প্রতিবাদে চুঁচুড়া থানায় স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলাম আমরা। যাতে প্রশাসন এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু দেখলাম, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশই বাধা দিল। টেনেহিঁচড়ে আমাদের কর্মীদেরকে থানায় ধরে নিয়ে গেল। দেখে মনে হচ্ছে, পুলিশ আর তৃণমূল একই দলের।’’
এ প্রসঙ্গে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘মিছিল করে থানায় স্বারকলিপি জমা দেওয়ার কর্মসূচি ছিল বিজেপি। কিন্তু থানার সামনে এসে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দলের কর্মীরা। বিজেপির স্বারকলিপি জমা দেওয়ার কর্মসূচি আইন অমান্য কর্মসূচিতে বদলে যাওয়ায় বাধা দেওয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৮ জনকে।’’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়।
তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিধায়ক অসিত বলেন, ‘‘নেই কাজ তো খই ভাজ! গত ৫ বছরে বিজেপি কোনও কাজই করেনি। আসলে ওদের হাতে কোনও কাজই নেই। তাই, নাটক করে প্রচারে থাকতে চায়। ২০১৯ সালে লকেট সাংসদ হয়েছিলেন। ২০২১-এ মানুষ তাঁকে নূপুর করে দিয়েছে। আমি শুধু এটাই বলতে চেয়েছি। এর জন্য এত নাটক করছে!’’
প্রসঙ্গত, ‘পায়ের নূপুর’ মন্তব্য নিয়ে লকেটও অসিতকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রাচীন কালের গল্পে-ইতিহাসে পড়েছি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের পণ্য হিসাবে দেখা হত। বাইজি প্রথাও দেখেছি। মহিলাদের সঙ্গে যা ইচ্ছে, তা-ই করা হত। খুন করে ফেলে দেওয়া হত নদীর জলে। এঁদের ভাবনাচিন্তা সেই জায়গাতেই রয়ে গিয়েছে। মহিলাদের পণ্য হিসেবেই দেখেন এঁরা। ওঁর আশপাশে যে মহিলারা থাকেন, তাঁরাও দেখুন, তাঁদের সম্পর্কে কী মনোভাব পোষণ করেন তৃণমূল নেতা।’’ লকেট আরও বলেন, ‘‘এক জন মহিলা সাংসদকে যে ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা আমাদের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর দেখা উচিত। আমি মুখ্যমন্ত্রীর জায়গায় থাকলে ওঁর (তৃণমূল বিধায়ক অসিত) বাড়িতে গিয়ে ওঁর স্ত্রীর সামনে সজোরে থাপ্পড় মেরে আসতাম। মহিলারাই এক দিন ওঁকে গাছে বেঁধে পেটাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy