Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

সন্তানদের মুখ চেয়ে ‘শত্রুতা’ ভুলে বিয়ের পিঁড়িতে

কয়েক মাস আগেও পরস্পরের ‘শত্রু’ ছিলেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের দক্ষিণ মানশ্রী গ্রামের ওই দুই বাসিন্দা।

নবদম্পতি: সরস্বতী ও জয়দেব। —নিজস্ব চিত্র

নবদম্পতি: সরস্বতী ও জয়দেব। —নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৮
Share: Save:

প্রস্তাব দিয়েছিলেন গ্রামবাসী। প্রস্তাব দিয়েছিল পঞ্চায়েত। দ্বিধাদ্বন্দ্ব সরিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের চার হাত এক করলেন জয়দেব-সরস্বতী।

কয়েক মাস আগেও পরস্পরের ‘শত্রু’ ছিলেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের দক্ষিণ মানশ্রী গ্রামের ওই দুই বাসিন্দা। উঠতে-বসতে পরস্পরকে গাল পাড়তেন। কারণ, জয়দেবের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সরস্বতীর স্বামী। বিষয়টি জানাজানিও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সরস্বতী সেই জয়দেবেরই ঘরণী। পরিস্থিতিই তাঁদের মিলিয়ে দিল।

কী সেই পরিস্থিতি? কয়েক মাস আগে আত্মঘাতী হন জয়দেবের স্ত্রী এবং সরস্বতীর স্বামী। দু’জনেরই একটি করে সন্তান রয়েছে। জয়দেবের দশ বছরের ছেলে। সরস্বতীর ছ’বছরের মেয়ে। ওই আত্মহত্যার ঘটনার পরে নাবালক সন্তানকে বড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন সরস্বতী এবং জয়দেব। গ্রামবাসীদের অনেকেই তাঁদের পরামর্শ দেন, ছেলেমেয়েদের স্বার্থে তাঁরা বিয়ে করতে পারেন। তবু সঙ্কোচ কাটেনি। দু’জনে গিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দেবীপুর পঞ্চায়েতে। প্রধান প্রশান্ত দে-ও প্রায় একই প্রস্তাব দেন। আর ভাবেননি জয়দেব-সরস্বতী। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে গত বৃহস্পতিবার দু’জনে স্থানীয় মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন।

আরও পড়ুন: সেনেট আজ বসছে না, ব্যাখ্যা নয় ধনখড়কে

‘‘মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নতুন করে ঘর বেঁধেছি।’’— বলছেন সরস্বতী। জয়দেবও বলছেন, ‘‘পরিস্থিতিই আমাদের সংসারে বাঁধল।’’ স্থানীয় বিধায়ক সমীর পাঁজাও মনে করেন, সন্তানদের কথা ভেবে জয়দেব-সরস্বতী ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।

সোমবার জয়দেবের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মাটির ঘরের বারান্দায় সরস্বতী রান্না করছেন। তাঁকে সাহায্য করছেন জয়দেব। সরস্বতীর মেয়ে একপাশে খেলছে। জয়দেবের ছেলে স্কুলে গিয়েছে। তাঁরা নতুন ঘর বাঁধায় পাড়া-পড়শিরা খুশি। শৈরেন্দ্র মালিক নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘দু’জনের সন্তানই ছোট। একটা অনভিপ্রেত ঘটনা ওদের ভাল ভাবে বেড়ে ওঠার পথে অন্তরায় হবে, এটা ঠিক নয়। দু’জনেই যে একে অপরকে বুঝিয়ে সংসার পেতেছে, এতে সকলেরই ভাল হবে। ছেলেমেয়ে দু’টো বাবা-মায়ের ভালবাসা পাবে।’’ বিমলা মালিক নামে আর এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ওঁরা অন্য কাউকে বিয়ে করলে হয়তো সন্তানদের সৎমা অথবা সৎবাবার কাছে লাঞ্ছিত হতে হত। এ ক্ষেত্রে তা হবে না বলেই আশা করা যায়।’’

গ্রামবাসীদের চর্চায় এখন ওই নতুন সংসার।

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy