Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Gunman in Malda School

বাচ্চাগুলোকে দেখে মাথা কাজ করছিল না! মালদহে বন্দুকবাজকে ধরে ‘হিরো’ কলকাতার আজহারউদ্দিন

মালদহের স্কুলে বন্দুকবাজের হামলায় যখন সবাই সন্ত্রস্ত, তখন ডিএসপি আজহারউদ্দিন ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঝুঁকি নিয়ে বিপন্মুক্ত করেন পড়ুয়াদের। তাঁর সঙ্গেই কথা বলেছে আনন্দবাজার অনলাইন।

DSP of Malda police Ajahruddin Khan became hero after the gunman incident in school dgtld

কে এই এই সাহসী পুলিশ? ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৩৬
Share: Save:

নিজের অফিসেই বসে ছিলেন মালদহের ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান। বুধবার দুপুরে হঠাৎ খবর আসে মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে এক বন্দুকবাজ ঢুকে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই চলে যান ঘটনাস্থলে। পুলিশ তখন স্কুল ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু কেউই এগিয়ে যেতে পারছেন না। পুলিশ দেখলেই রেগে যাচ্ছেন বন্দুকবাজ দেব বল্লভ। সেই সময়েই আচমকা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দুকবাজের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন আজহারউদ্দিন। বন্দুক ধরা হাতটাকে উপরে করে দিলেও কম শক্তি দেখায়নি বন্দুকবাজ। তবে তত ক্ষণে অন্য পুলিশকর্মীরাও আজহারউদ্দিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। গোটা ঘটনার কথা জানার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘পুলিশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভাল কাজ করেছে।’’ যে কৃতিত্বের অনেকটাই প্রাপ্য আজহারউদ্দিনের।

হাতে অল্প চোট পেলেও বন্দুকবাজকে ধরতে পেরে খুশি আজহারউদ্দিন। তাঁকে নিয়ে গর্ব করছেন পুলিশকর্তারাও। তবে সেই সময়ের কথা মনে করে সাহসী আজহারউদ্দিন জানালেন, পড়ুয়াদের কী হয়ে যাবে ভেবে তখন তাঁর মাথা কাজ করেনি। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে নিয়েছিলেন।

বাড়ি কলকাতার পার্ক সার্কাসে। সিটি কলেজে শারীরবিদ্যা (ফিজিওলজি) নিয়ে পড়াশোনা। তার পরে পুলিশে চাকরি। বছর আড়াই আগে চাকরি সূত্রেই মালদহে যাওয়া। যে স্কুলে হামলা হয়েছে সেটি ডিএসপি হিসাবে তাঁরই এলাকার মধ্যেই পড়ে। কেমন করে ধরলেন? বন্দুকবাজের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকির কথা মনে হয়নি? আজহারউদ্দিনের কথায়, ‘‘ওখানে গিয়ে দেখি পড়ুয়াদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। আমি এখনও বাবা হইনি। কয়েক বছর আগেই বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছিল, ওরা আমার সন্তানের মতো। দেখেশুনে মাথা কাজ করছিল না। মাথা ঠান্ডা করে পরিকল্পনা করি।’’

সেই পরিকল্পনার কথাও আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান আজহারউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘গিয়ে দেখি, পুলিশকে দেখলেই বন্দুকবাজ রেগে যাচ্ছেন। তাই আমি স্কুলের পিছন দিকে চলে যাই। পুলিশের পোশাকে কিছু করা যাবে না বুঝে স্থানীয় এক জনের কাছ থেকে টিশার্ট চেয়ে নিই। জামার বদলে টিশার্ট পরে জুতো খুলে হাওয়াই চটি পায়ে গলাই। বেল্টও খুলে ফেলি। আগেই দেখেছিলাম, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভয় পাচ্ছেন না বন্দুকবাজ। ছবি তুলতে দিচ্ছেন, কথাও বলছেন। আমিও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে মিশে যাই। উনি বুঝতে পারেননি, আমি পুলিশ। তার পরে মুহূর্তের সিদ্ধান্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ি।’’

সেই সময়ে তো গুলি চালিয়ে দিতে পারতেন বন্দুকবাজ! আজহারউদ্দিন বলেন, ‘‘সেই চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু আমি আগেই বন্দুক ধরা হাতটা উপরের দিকে করে দিই। তার পরে সর্বশক্তি দিয়ে মাটিতে ফেলি। আমাকে ব্যাকআপ দেওয়ার কথা আগেই পুলিশকর্মীদের বলে রেখেছিলাম। সেই মতো সবাই চলে আসেন। সবাই মিলে ধরে ফেলি।’’ এর পরে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে এলে দেখা যায় তাঁর কাছে আরও একটি বন্দুক এবং ছুরি ছিল। সঙ্গে পেট্রল বোমাও। তিনি আরও বলেন, ‘‘বড় বিপদ হতে পারত। বন্দুকবাজকে ধরে ফেলার পরেই পড়ুয়াদের বাইরে বার করে আনতে উদ্যোগী হই। কারণ, তখন ওদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।’’

জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার জন্য সকলেই তাঁর প্রশংসা করছেন। তবে আজহারউদ্দিন বলছেন, ‘‘আমি আমার কর্তব্য করেছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gunman in Malda School Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE