Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coal Smuggling

Coal Smuggling: জল মিশিয়ে কয়লা চুরি

কী কী উপায়ে চলত চুরি, কী ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন নানা ক্ষেত্রের লোকজন, নজরে আর কারা— সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এল কী তথ্য?

কুলটিতে অবৈধ কয়লা খনন।

কুলটিতে অবৈধ কয়লা খনন। ফাইল চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ০৭:১২
Share: Save:

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীকে হাত করা গেলে ভাল। তা না হলেও অসুবিধে নেই। অন্য ফন্দিও আঁটা ছিল চোরেদের। মাঝপথে ডাম্পার থেকে কিছু কয়লা নামিয়ে নিয়ে পরিমাণ মতো জল ঢেলে দিলেই বুজে যেত ওজনের ফাঁক। আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় কী ভাবে চলত কয়লা চুরির সিন্ডিকেট, আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে জমা দেওয়া প্রাথমিক চার্জশিটে তার এমন নানা পদ্ধতির কথা দাবি করেছে তদন্তকারী সংস্থা।

মূলত চারটি উপায়ে অনুপ মাজি ওরফে লালার লোকজন কয়লা চুরি করত বলে অভিযোগ সিবিআই সূত্রের। প্রথমত, ইসিএল-এর পরিবহণ-ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে কয়লা চুরির অভিযোগ। নিয়ম হল, খনি থেকে বেরোনোর আগে কয়লা বোঝাই ডাম্পারের ওজন ‘কাঁটা ঘরে’র যন্ত্রে মাপা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, সেখানেই হত গরমিল। একটি ডাম্পারে ১৫ টন কয়লা ধরে। কিন্তু খনির ডিপো থেকে তোলা হত তার অনেকটাই বেশি কয়লা। কাঁটা ঘরে সে ডাম্পার পৌঁছলে, সংশ্লিষ্ট ‘কাঁটাবাবুর’ (কাঁটা ঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক) ‘কারসাজিতে’ ওজন দেখানো হত, ১৫ টন। অতিরিক্ত যে কয়লা ডাম্পারে থাকত, তা রাস্তায় চিত্তরঞ্জন রোড, চাঁদা, লছিপুরের মতো নানা এলাকায় নামাত লালার লোকজন।

কিন্তু অনেক সময়ে ইসিএলের কর্তারা নজরদারি চালাতেন। তখন ১৫ টন কয়লাই তোলা হত ডাম্পারে। তবে পথে কয়লা নামিয়ে নেওয়া হত বলে অভিযোগ। এক তদন্তকারীর কথায়, “যে ওজন কম পড়ত, সেই পরিমাণ জল মেশানো হত ডাম্পারের কয়লায়। ফলে, ওজনে ধরার উপায় থাকত না।”

দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল এবং বিসিসিএল-এর ‘লিজ় হোল্ড’ এলাকায় কয়লা চোরেরা অবৈধ খাদান তৈরি করত বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, আসানসোল, কুলটি, বারাবনি, সালানপুরে এর মাথায় ছিলেন জয়দেব মণ্ডল ও নারায়ণ খরকা। বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় নীরদবরণ মণ্ডল, পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া, ভামুড়িয়া-সহ লাগোয়া অঞ্চলে লালা নিজে ও গুরুপদ মাজি এই কাজ করতেন বলেও দাবি। জয়দেব, নারায়ণ, গুরুপদ ও নীরদবরণকে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। এখন তাঁরা জামিনে মুক্ত। চার্জশিটে তাঁদের নাম রয়েছে।

তৃতীয়ত: ইসিএলের পাণ্ডবেশ্বর, ঝাঁঝরা, শোনপুর বাজারি, কুনস্তরিয়া ও সাতগ্রাম এলাকায় বিভিন্ন বৈধ খনিতে লোক নামিয়ে কয়লা চুরি চলত বলে অভিযোগ। সিবিআই অফিসারেরা জেনেছেন, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসিএলের আধিকারিক ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশেই রাতের অন্ধকারে তা চলত। চতুর্থত: ইসিএল বা বিসিসিএল-এর কয়লা রেলের রেকে পরিবহণের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে নেওয়া হত।

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ‘কয়লা-সিন্ডিকেটে’ জড়িত ছিলেন শ্রমিক থেকে শিল্পোদ্যোগী, এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্তা, পুলিশের একাংশও। পরিবর্তে তাঁদের জন্য ছিল ‘সুযোগ-সুবিধা’র ব্যবস্থাও। বিষয়টি নিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট বা ইসিএলের কোনও আধিকারিক মুখ খুলতে চাননি। ইসিএলের শুধু দাবি, কয়লা চুরির অভিযোগ সামনে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযোগও জানানো হয় স্থানীয় থানায়।

চুরির পরে কয়লা পরিবহণ কী ভাবে হত, তা-ও চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কয়লা পরিবহণের সময়ে ডাম্পার ও ট্রাক চালকের কাছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বৈধ চালান থাকে। অভিযোগ, চোরাই কয়লার গাড়িতে চালকের কাছে থাকত ফুল, ফল-সহ নানা সঙ্কেত বা টাকার নম্বর দেওয়া বিশেষ ‘প্যাড’। তা দেখালে রাস্তায় নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা যেত বলে দাবি তদন্তকারীদের। এই সূত্রে নিরাপত্তা ও নজরদারির দায়িত্বে থাকা কিছু লোকজন তাদের নজরে রয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রে খবর। লালার ‘হিসাবরক্ষকদের’ সঙ্গে কথা বলে সে সব সঙ্কেত উদ্ধারও হয়েছে, দাবি আধিকারিকদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Coal Smuggling Asansol Raniganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy