Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
IAS

IAS cadre rules: রাজ্য না দিলে কেন্দ্র অফিসার পাবে কোথায়, লিখলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সচিব

আইসিএস থেকে আইএএস হল। আর তাদের নিয়োগের ভার পড়ল ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-এর উপরে।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

সুনীল মিত্র
সুনীল মিত্র
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৩৭
Share: Save:

১৯৫৪ সালের আইএএস ক্যাডার রুল সংশোধনী প্রসঙ্গে অনেকের অভিমত, এতে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

প্রথমেই আমার মতামত স্পষ্ট ভাবে কয়েকটি শব্দে বলতে চাই, এটা কিন্তু এত সিরিয়াস বিষয় নয়। পরিস্থিতিকে ‘রাজনৈতিক’ করারও কোনও কারণ দেখছি না। আলোচনায় সবই সম্ভব। আমার মনে হয় আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান অবশ্যই হয়ে যাবে। শুধু দু’পক্ষের কথা বলাটা প্রয়োজন।

আইসিএস থেকে আইএএস হল। আর তাদের নিয়োগের ভার পড়ল ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-এর উপরে। নিয়োগের পর আইএএস-দের রাজ্য ক্যাডারে বণ্টন করা হয়। তখন থেকেই তাঁরা রাজ্যের অধীনস্থ হয়ে যান। শুধুমাত্র কোনও রকমের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রাজ্য ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে নিতে পারে না। সে জন্য একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যকেই ঠিক করতে হয় এ বছর নতুন করে ক’জন আইএএস অফিসার প্রয়োজন। কত জন অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকারের ডেপুটেশনে পাঠাতে হবে এবং কত জন অফিসার এ বছর অবসর গ্রহণ করবেন। বিভিন্ন স্তরের সেই হিসাব তৈরি করা, আলোচনা করে ‘অপশন’ নেওয়ার পর তা জানাতে হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। গোটাটাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাধানে হয়। এর পর সেই অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে ইউপিএসসি।

অন্য দিকে, কত জন অফিসার কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ডেপুটেশনে’ যাবেন সেই তালিকা রাজ্যের কাছ থেকে পাওয়ার পর কেন্দ্র তাঁদের সকলকে না-ও নিতে পারে। যে অফিসারদের নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়, তাঁদের নাম বিভিন্ন মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্দেশিকা জারি করে। সেই মতো সেই মন্ত্রকগুলি তাঁদের নেয়।

‘অপশন’-এর কথা কেন বললাম? কারণ, রাজ্য মনে করতেই পারে কোনও অফিসার কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁকে ‘ডেপুটেশনে’ পাঠানো যাবে না। সেই অনুযায়ী ‘অপশন’ নিয়ে তালিকা তৈরি হয়। আবার কোনও অফিসার যেতে চাইলেই যে তাঁকে রাজ্য যেতে দেবে, এমনটাও নয়। পুরোটাই রাজ্যের হাতে।

সংবাদমাধ্যমে জানলাম, কেন্দ্রের হাতে নাকি এখন কাজ করার মতো অফিসার কম পড়েছে! এই কম পড়াটা মাঝেমাঝেই হয়। এটাও কিন্তু ভাবার বিষয়। রাজ্যের হাতে সবটা থাকলে তারা সব সময় পর্যাপ্ত সংখ্যার অফিসার কিন্তু কেন্দ্রে ‘ডেপুটেশনে’ পাঠাচ্ছে না। তা হলে কেন্দ্রীয় সরকার কাজকর্ম চালাবে কী ভাবে? তাদেরও তো যোগ্য অফিসার প্রয়োজন। না হলে সিস্টেমটা চলবে কী করে!

আবার অফিসারদের দিক থেকে দেখলে কেন্দ্রের ‘ডেপুটেশনে’ তাঁদের যাওয়ার প্রয়োজনও রয়েছে। অভিজ্ঞতা হবে কী ভাবে না হলে! কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ করা মানে তো দেশ জুড়ে কাজের সুযোগ। অনেক ধরনের সুযোগ। তার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা। এক জন অফিসারের এই অভিজ্ঞতা না হলে তিনি সিস্টেমের জন্য অপরিহার্য হবেন কী ভাবে? আর যে কোনও অফিসার সেটা অবশ্যই হতে চাইবেন। চান-ও। ফলে রাজ্যের কাছে অপরিহার্য হতে গিয়ে কেউ কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে যেতে পারেন না। সেটাও ভাবতে হবে রাজ্যকে। কারণ এখনও পর্যন্ত যা নিয়ম, তাতে সবটাই রাজ্যের হাতে।

আর এখানেই গোল বেধেছে। কেন্দ্র সংশোধনী এনে এটা আর রাজ্যের হাতে রাখতে চাইছে না। কিন্তু এত বছরের ‘রুল’ এ ভাবে হঠাৎ পাল্টে গেলে সিস্টেমটাই তো ঘেঁটে যাবে! ফলে এত দ্রুত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আবার কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রণ‌ংদেহি হয়েও কি কাজ হবে! বরং আলোচনাই একমাত্র পথ। সে পথেই হাঁটুন মুখ্যমন্ত্রীরা। তাতেই কাজ হবে। আমার এমনটাই বিশ্বাস।

(লেখক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রাজস্ব-সচিবমতামত নিজস্ব।)

অন্য বিষয়গুলি:

IAS central state
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE