এখানেই খুন হন কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস।
খুনের সময়ে তিনি ছিলেন ঘটনাস্থলেই। শুধু তা-ই নয়, দুর্গাপুরে একটি হোটেলে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় রাজু ঝায়ের। এ সবই জানা যাচ্ছে গাড়ির চালক এবং হোটেলের কর্মীদের একাংশের কাছ থেকে। হোটেলে বাদানুবাদের কথাও অস্বীকার করছেন না সেখানে হাজির কেউ কেউ। আবার বেরোনোর আগে তাঁর জন্য রাজু অপেক্ষা করছিলেন, এ কথাও জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে। এই ঘটনায় আপাতত এই ‘তিনি’, গরু কারবারি আব্দুল লতিফই আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। সংশ্লিষ্ট মহলের লোকজন বলছেন, লতিফ ও রাজুর একসঙ্গে আলোচনা, বাদানুবাদ এবং তার পরে একসঙ্গেই দুর্গাপুর থেকে বার হওয়া নতুন সমীকরণের দিকে ইঙ্গিত করছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, এই খুনের সঙ্গে লতিফেরই কি কোনও যোগ রয়েছে?
পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন লতিফের এসইউভি-র চালক নুর হোসেন। সেখানে তিনি সাফ জানিয়েছেন, সে দিন লতিফ সেখানে ছিলেন। তবে ঘটনার পরে তাঁকে আর তিনি দেখতে পাননি। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে তিনি ঘটনাস্থল থেকে বেপাত্তা হয়ে গেলেন? পুলিশের ধারণা, ভিড়ের সুযোগ নিয়ে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছেন লতিফ।
যে এসইউভি-তে দুর্গাপুর থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন রাজু, সেটি লতিফেরই। গাড়িটির চালক, বীরভূমের দুবরাজপুরের বাসিন্দা নুর অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক ধরে তিনি লতিফের গাড়ি চালাচ্ছেন। শনিবার সকালে অন্য দিনের মতোই ইলামবাজারে লতিফের বাড়িতে যান। বেলা দেড়টা নাগাদ লতিফ গাড়িতে দুর্গাপুর রওনা দেন। তাঁর কথা মতো দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি মোড় থেকে ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে গাড়িতে তোলা হয়। তার পরে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে একটি হোটেলে পৌঁছন। সেখানেই ছিলেন রাজু। লতিফ, ব্রতীন ও রাজু হোটেলের ভিতরে চলে যান।
নুরের দাবি, সন্ধ্যা ৬টা ১০ নাগাদ ওই তিন জনকে নিয়েই কলকাতা রওনা দেন তিনি। রাজুর কথা মতোই ৭টা ৩৫ মিনিট নাগাদ শক্তিগড়ে গাড়ি দাঁড় করানো হয়। রাজু ছাড়া তাঁরা তিন জন গাড়ি থেকে নামেন। ঝালমুড়ি কিনে গাড়িতে উঠতে যাওয়ার সময়ে ব্রতীন তাঁকে আবার পানমশলা কিনতে দোকানে পাঠান। নুরের দাবি, সেখান থেকেই তিনি দেখেন, জনা তিনেক লোক গাড়ি ঘিরে গুলি চালাচ্ছে। তার পরে নীল রঙের গাড়িতে উঠে তারা পালিয়ে যায়। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখেন, সামনের আসনে বসা রাজু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রতীনের হাত থেকেরক্ত ঝরছে।
দুর্গাপুরে নানা সূত্রের দাবি, কলকাতা রওনা দেওয়ার আগে হোটেলে লতিফ ও রাজুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় কানে গিয়েছিল হোটেলের কিছু কর্মীর। হোটেলের একটি সূত্রের আরও দাবি, কলকাতা রওনার জন্য আগে ঠিক করে রাখা সময় অনুযায়ী লতিফের গাড়িতে রাজুর ব্যাগ তুলে দেন কর্মীরা। কিন্তু তখন লতিফ জানান, তিনি রোজা ভেঙে বেরোবেন। সে জন্য কিছু ক্ষণ
দেরি হয়। তখন হোটেলের করিডরে রাজুকে পায়চারি করতে দেখা গিয়েছিল বলে দাবি। শেষ মুহূর্তে কেন বেরোনোর সময় পিছোলেন, শক্তিগড়ে রাজু গাড়ি থেকে না নামলেও, তিনি নামলেন, ঘটনার পরে উধাও হয়ে গেলেন— লতিফের এমন গতিবিধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ জানায়, রাজুরা কলকাতায় কোথায় যাচ্ছিলেন, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, রবিবার রাজুর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের আরও দাবি, ইসিএলের কয়লা পরিবহণের বরাত নিয়ন্ত্রণ ঘিরে কোনও অশান্তির সঙ্গে ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে। একটি বরাত পাওয়ার বিষয়ে তিন জন দাবিদার ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এগিয়ে ছিলেন রাজু। অন্য দু’জনও প্রাথমিক ভাবে কয়লা কারবারি বলেই জানা গিয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, রাজু খুন হলে কারা লাভবান হতে পারেন, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy