পাঁচ মাসের সন্তান নাজনিনের সঙ্গে শ্রীনা খাতুন। ফাইল চিত্র
ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু-শংসাপত্রে লেখা ‘সেপটিক শক ইন আ কেস অব ডেঙ্গি ফিভার’। ডেঙ্গি-জ্বরের শিকার এ বার শ্রীনা খাতুন (২৬) নামে এক গৃহবধূ। সোমবার দুপুরে কলকাতায় ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীনার স্বামী নাসিম আলি খান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক। তিনি নিউ টাউনের ডিসি ব্লকে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়ায় বসবাস করতেন। এই ঘটনায় প্রমাণিত, কলকাতা ও শহরতলিতে ডেঙ্গির দাপটে লাগাম পড়েনি।
নাসিম জানান, পাঁচ মাসের সন্তান নাজনিনকে নিয়ে দু’সপ্তাহের জন্য নিউ টাউনে ডিসি ব্লকে তাঁর ভাড়ার ফ্ল্যাটে ছিলেন শ্রীনা। সেখানেই তিনি জ্বরে পড়েন। ১৯ নভেম্বর জ্বরে আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বর্ধমানে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে শ্রীনার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ২০ তারিখে তাঁকে বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু ‘এনএসওয়ান পজিটিভ’ ধরা পড়ে।
তার পরে অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকায় ২১ নভেম্বর ওই গৃহবধূকে কলকাতার একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্ধমানে থাকাকালীন তাঁর প্লেটলেট নেমে দাঁড়ায় ৬৫ হাজারে। ২১ তারিখে কলকাতার হাসপাতালে সেটা ১৫ হাজারে নেমে যায়। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় সে-রাতেই তাঁকে জরুরি বিভাগ থেকে আইসিইউ-এ নিয়ে যাওয়া হয়। প্লেটলেট দেওয়া হয় ছয় ইউনিট। ২২ নভেম্বর বিকেল থেকে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে শ্রীনার। রাতে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া হলেও তিনি তা ব্যবহার করতে পারছিলেন না। তার পরে রাতেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়।
২৩ এবং ২৪ নভেম্বর প্লেটলেট বাড়লেও শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজকর্মে সমস্যা দেখা দেয়। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। ২৪ তারিখ রাতে ক্রিয়েটিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রাতেই ডায়ালিসিস করা হয়। ২৫ নভেম্বর বেলা ১টা ২৫ মিনিটে মারা যান ওই গৃহবধূ।
নাসিম জানান, সন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী মাঝেমধ্যে নিউ টাউনে যাতায়াত করতেন। ‘‘মাত্র দু’সপ্তাহের জন্য পরিবারকে নিউ টাউনে নিয়ে এসেছিলাম। আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল,’’ বলছেন ওই শিক্ষক।
নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের দাবি, মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে তাঁদের কর্মীরা ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে চলেছেন। নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সচেতনতার প্রচারে। এ ছাড়াও এক পতঙ্গবিদ গবেষণারত ছাত্রদের নিয়ে এলাকায় কাজ করে চলেছেন।
এনকেডিএ সূত্রের খবর, তাঁদের এলাকায় মশার উপদ্রব তুলনায় কমেছে বলেই বাসিন্দারা তাঁদের জানিয়েছেন। এর মধ্যেই মৃত্যুর ঘটনা। ওই শিক্ষক যেখানে ভাড়ার ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন, সেই এলাকার পরিস্থিতি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy