সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। — নিজস্ব চিত্র।
মৃত শিশুর দেহ নিজেদের ব্যবস্থায় বাড়ি নিয়ে যেতে কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা যে ‘অপারগ’, সে সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে কথা জানা থাকলে তাঁরা মানবিকতার খাতিরে দায়িত্ব নিয়ে ওই শিশুটির দেহ তার বাড়িতে পরিজনদের কাছে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করতেন। রাজ্যে সাড়া ফেলে-দেওয়া উত্তরবঙ্গের ঘটনা সম্পর্কে নবান্নে এমনই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে নবান্ন সূত্রেই বিষয়টি জানা গিয়েছে।
শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ব্যাগে করে তাঁর মৃত পুত্রসন্তানের দেহ কালিয়াগঞ্জের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা অসীম। বিষয়টি নিয়ে রবিবার শোরগোল শুরু হয়। সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। সোমবার বিকেলের মধ্যেই সেই রিপোর্ট কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছেন সুপার সঞ্জয় মল্লিক। সুপারের সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমার কাছে একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। আমি সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর রিপোর্টে হাসপাতাল সুপার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, মৃত শিশুর পরিবার যে আর্থিক ভাবে সচ্ছল নয়, দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার মতো সঙ্গতি যে তাদের ছিল না, তা তাঁরা জানতেন না। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টারের অফিস রয়েছে। রয়েছে রোগী সহায়তা কেন্দ্রও। কিন্তু কোনও জায়গাতেই ওই মর্মে কোনও তথ্য ছিল না। রিপোর্টে সুপার জানিয়েছেন, মৃত শিশুর দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে ওই অভাবী পরিবার যে অপারগ, সেই তথ্য জানা থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত ভাবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন। অতীতেও তাঁরা এমন ব্যবস্থা করেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও বক্তব্য, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ পুর এলাকায় নয়, গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। সে কারণে পুর এলাকার মতো পুরসভার শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা ওই এলাকায় নেই। খবর দিলে শিলিগুড়ি শহর থেকে শববাহী গাড়ি এসে দেহ নিয়ে যায়। আগে একাধিক বার দুঃস্থ পরিবারের কেউ মারা গেলে সে ভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিছু দিন আগে একটি চা-বাগান থেকে এক ব্যক্তির দেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল ময়নাতদন্ত করানোর জন্য। সেই দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না সংশ্লিষ্ট পরিবারটির। তখন মানবিক কারণে হাসপাতালের তরফেই সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অসীমের শিশু সন্তানের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের দুরবস্থার কথা জানলে সেই ক্ষেত্রেও হাসপাতাল মানবিক কারণেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করত।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি অসীমের পুত্রসন্তানের বয়স ছিল পাঁচ মাস। অসীম এবং তাঁর পরিবার কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা। শনিবার রাতে শিশুটির মৃত্যু হয়। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক অসীম জানিয়েছিলেন, সন্তানের দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজে ১০২ নম্বরে ফোন করেছিলেন। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সে কেউ দেহ নিয়ে যেতে প্রথমে রাজি হননি। তার পরে ৮ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। পরিযায়ী শ্রমিক অত টাকা ছিল না। ফলে কাছের বাজার থেকে একটি ব্যাগ কিনে এনে তাতেই সন্তানের নিথর দেহটি ভরে তিনি বাসে উঠে পড়েন। সহযাত্রীরা যাতে বুঝতে না পারেন, তাই কাপড়জামা দিয়ে ঢেকে দেন শিশুটির দেহ। ওই ভাবেই সন্তানের দেহ নিয়ে কালিয়াগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন অসীম। বিষয়টি জানাজানি হতেই রাজ্য জুড়ে শোরগোল তৈরি হয়। তার প্রেক্ষিতেই নবান্নের তরফে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল হাসপাতাল সুপারের পাশাপাশি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy