বাঁ দিক থেকে অমিত শাহ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে সংগঠনের জোরেই ভোটে জেতার নির্দেশ দিলেও বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি শাখার বৈঠকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বড় ইঙ্গিত দিলেন অমিত শাহ। রাজ্য ও জেলা স্তরে তথ্যপ্রযুক্তি এবং সমাজমাধ্যম পরিচালনা করেন যে কর্মীরা, মঙ্গলবার জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে তাঁদের ডাকা হয়েছিল। পাশাপাশি, ডাক পেয়েছিলেন সরাসরি বিজেপি না করলেও ব্যক্তিগত ভাবে যাঁরা গেরুয়া শিবিরের হয়ে প্রচার করেন তাঁরাও। ওই সভাতেই ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কবে নেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন শাহ। তিনি প্রশ্নের জবাবও দেন। সভাঘরে ওঠা প্রশ্নের জবাব দিয়ে অনেক হাততালিও পান শাহ। আর শাহি-বক্তৃতার মাঝেই বারংবার ‘মমতা চোর’ বলে স্লোগান তুললেন মঞ্চে বসে থাকা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রসঙ্গত, ‘ভাইপো’ বলতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বিজেপি ইঙ্গিত করে থাকে। শুভেন্দু যখন একনাগাড়ে ‘ভাইপো’ বলে আক্রমণ করতে শুরু করেন, তখনই অভিষেক নিজে এক বার বলেছিলেন যে, ‘‘ওঁরা আমার নাম নিতে ভয় পায়। তাই ভাইপো বলে।’’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শাহ তাঁর বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার তৃণমূল নেতাদের নাম বলতে থাকেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের নাম বলার পরেই কর্মীদের দিক থেকে ‘ভাইপোর কী হবে’ প্রশ্ন ছুটে আসে শাহের দিকে। এর পরেই শাহ হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘আমি যাঁরা গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন তাঁদের নাম বললাম। যাঁরা গ্রেফতার হবেন তাঁদের নাম তো বলিনি।’’ এর পরেই তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়ে জাতীয় গ্রন্থাগারের সভাগৃহ। তবে তার আগে থেকেই শুভেন্দু মাঝে মাঝেই ‘মমতা চোর’ স্লোগান তুলতে থাকেন। এক বার শাহকে বক্তৃতা বন্ধও করে দিতে হয়। শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতেও দেখা যায় শাহকে।
সমাজমাধ্যমে যাঁরা দলের হয়ে প্রচার করেন মঙ্গলবার তাঁদের ‘সাইবার যোদ্ধা’ বলে সম্বোধন করেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। দিদি যাই করুন না কেন, বাংলায় বিজেপির জয় নিশ্চিত।’’ আগে তিনি রাজ্য নেতাদের ৩৫ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বাংলায় এ বার ৩৫-এর বেশি আসনে জয় পাবে বিজেপি।’’ সমাজমাধ্যমই নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারবে বলে জানিয়ে শাহ বলেন, ‘‘২০১৫ সালে দিদি আমাকে আর বিজেপিকে হালকা ভাবে নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বিজেপি কেমন।’’ শাহ দাবি করেন, বিজেপির জন্মলগ্ন থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী শহিদ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গেই। বাংলা থেকে ৩৫ আসনের বেশি দিলে ‘মোদীজি সোনার বাংলা’ গড়ে দেবেন বলেও জানান শাহ। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলাতেও বিজেপির জয় নিশ্চিত।
শাহের বক্তৃতায় উঠে আসে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র প্রসঙ্গও। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে শাহ বলেন, ‘‘এক জন সাংসদ লিপস্টিক, ব্যাগ, চপ্পল পাওয়ার জন্য বিদেশিকে সাংসদের গোপন পাসওয়ার্ড দিয়ে দিতে পারেন আর দিদি চুপ। তার মানে আপনি কাকে সমর্থন করেন তা স্পষ্ট।’’ একই সঙ্গে শাহ বাংলায় সব কাজেই কাটমানির গল্প থাকে বলে উল্লেখ করে উপস্থিত দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন ‘‘এই টাকা কোথায় যায়?’’ এই সময়ে কর্মীরা তৃণমূল নেতাদের নাম বলতে থাকলে শুভেন্দু চিৎকার করে বলেন, ‘‘মমতা চোর, মমতা চোর।’’ বক্তৃতা থামিয়ে দেন শাহ। গোটা সভাকক্ষে তখন শুভেন্দুর তোলা স্লোগানের অনুরণন চলতে থাকে।
মঙ্গলবার ওই মঞ্চে বক্তৃতা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও। তিনি অবশ্য তৃণমূলকে আক্রমণের দিকে বিশেষ যাননি। বরং, কী ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রচার করা যায় সেই পরামর্শ দেন। তবে মঙ্গলবারের সভায় খানিক গোলমালও হয়। এই ধরনের কর্মসূচি ২০২১ সালেও হয়েছিল কলকাতায়। সে বার শাহ বক্তৃতা করেন সায়েন্স সিটি সভাকক্ষে। কিন্তু এ বার আসন ভরানো যাবে কি না সেই ভাবনা থেকে বিজেপি অপেক্ষাকৃত ছোট সভাকক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু কলকাতার দলীয় কর্মীরা আগে থেকেই আসন দখল করায় দূর জেলা থেকে আসা আমন্ত্রিতদের অনেকেই সভায় ঢুকতে পারেননি। তাঁরা খাবারও পাননি বলে অভিযোগ ওঠে। তবে দিনের শেষে শাহের বার্তা পেয়ে খুশি বিজেপি তথ্য প্রযুক্তি শাখার সদস্যেরা। এই সভার পরেই শাহ ও নড্ডা নিউ টাউনের একটি হোটেলে চলে যান। সেখানে গিয়ে সুকান্ত এবং শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকে বসেন তাঁরা। দীর্ঘ ক্ষণ চলে ওই বৈঠক। রাতে সাড়ে ১০টার পর বৈঠক শেষে কলকাতা বিমানবন্দরের দিকে রওনা দেন শাহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy