সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সিন্দুক। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কমবেশি ২০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষপদে থাকাকালীন বিধবা বিবাহের মতো যুগান্তকারী সমাজ সংস্কারের কাজ করেছিলেন বিদ্যাসাগর। তাঁর দ্বিশতবর্ষে সেই সংস্কৃত কলেজের (যা এখন সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়) পুরনো দু’টি সিন্দুকে পাওয়া গেল বিধবাদের সাহায্যের তহবিল সংক্রান্ত নথিপত্র আর বেশ কিছু পদক। পাওয়া গিয়েছে পুরনো ডাকঘরের পাসবই, চেকবইও।
শুক্রবার সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয় একটি সিন্দুক এবং একটি দেওয়াল-সিন্দুক। সিন্দুকটি ছিল গুদামঘরে। লন্ডনের চাব’স কোম্পানির তৈরি সিন্দুকটি খুলতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হয়। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় সিন্দুক খোলা গিয়েছে। সেই সিন্দুকে পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন নথি এবং রুপোর পদক।
সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২৪ সালে। বিদ্যাসাগরের জন্ম তার চার বছর আগে। কালক্রমে সেই কলেজের পড়ুয়া ও প্রধান পুরুষ হয়ে ওঠেন বিদ্যাসাগর। তাঁর অনন্য কীর্তির মধ্যে আছে বিধবা বিবাহ প্রবর্তন এবং নারী শিক্ষা। এ দিন সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে যে-সিন্দুক খোলা হল, তাতে বিধবাদের সাহায্য করার জন্য তৈরি ‘মুক্তকেশী দেবী তহবিল’-এর নথি পাওয়া গিয়েছে। নথিটি ১৯৫৬ সালের। মনে করা হচ্ছে, তহবিলটি দীর্ঘদিন ধরেই চালু ছিল। এই নথি বিধবা বিবাহ প্রচলনে বিদ্যাসাগরের লড়াইকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, মুক্তকেশী দেবী বিধবা তহবিল স্বয়ং বিদ্যাসাগর চালু করেছিলেন কি না, সেটা গবেষণার বিষয়। তবে এ দিন যে-নথি পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে মনে হচ্ছে, স্বামীহারা মহিলারা ওই তহবিল থেকে মাসিক দু’টাকা সাহায্য পেতেন। দেখা যাচ্ছে, মোট আট জন টাকা পেয়ে প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন সই করেছেন, ছ’জন দিয়েছেন টিপছাপ। ‘‘এমনই ইতিহাস লুকিয়ে ছিল ওই সিন্দুকে। শুধুই লেখাপড়া নয়, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে কত বড় সমাজ সংস্কারের কাজ হত, তা বোঝা যাচ্ছে,’’ বলেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য।
বিধবাদের সাহায্য করার দলিলের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশ কিছু মূল্যবান নথি পাওয়া গিয়েছে সিন্দুকে। তার মধ্যে রয়েছে গালা দিয়ে সিল করা সাতটি খাম। উপাচার্য জানান, খামগুলি এ দিন খোলা হয়নি। খামের উপরের লেখা দেখে মনে হচ্ছে, ভিতরে রয়েছে সম্পত্তির স্বত্ব দানের নথি। এ বেঙ্কটরামন শাস্ত্রীর নামে ১৯৪৬ সালে ব্যাঙ্কের অর্থ জমা দেওয়ার কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে তিনটি রুপোর পদক। তার মধ্যে দু’টি গঙ্গামণি দেবী পদক এবং একটি এএন মুখার্জি পদক। গঙ্গামণি দেবীর নামাঙ্কিত দু’টি পদকের একটি ১৯১৯ সালের এবং অন্যটি ১৯৬৫ সালের। পূর্বতন সংস্কৃত ও প্রেসিডেন্সি কলেজে সংস্কৃতে প্রথম স্থানাধিকারীদের গঙ্গামণি দেবী রৌপ্য পদকে সম্মানিত করা হত। এএন মুখার্জি রুপোর পদকটি ১৯৩১ সালের। ওই পদক দেওয়া হত ইংরেজি ভাষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপককে। উপাচার্য বলেন, ‘‘১৯১৯ সালের পদক পাচ্ছি ২০১৯ সালে। ১০০ বছর ধরে পদকটি রক্ষিত ছিল সিন্দুকে। ১৯৬৫ সালের পদক ইঙ্গিত দিচ্ছে, গত ৫৪ বছরে এই সিন্দুক সম্ভবত খোলাই হয়নি। এই সব নথির ঐতিহাসিক মূল্য কতটা, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
দেওয়াল-সিন্দুকে পাওয়া গিয়েছে ৮৫টি পাসবই। সেগুলোর বেশির ভাগই ডাকঘরের। ১৯৩০ সালের ওই সব পাসবই ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেখান থেকে মেধাবৃত্তির টাকা দেওয়া হত।
উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এর মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে ১৮২৯ থেকে ১৮৩২ সালের ছাত্রদের হাজিরা খাতা, যাতে বিদ্যাসাগরের নাম রয়েছে ছাত্র হিসেবে। পাওয়া গিয়েছে একটি খাতা, যেটিতে নাম রয়েছে মহামহোপাধ্যায় উপাধি প্রাপকদের। যাঁদের অন্যতম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy