বৈশাখীকে পরিচালন সমিতির সম্পাদক করলেন পার্থ। —ফাইল চিত্র।
বরফ গলেছিল আগেই। ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব কমছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের— এমন ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল। সে ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল রাজ্যের শিক্ষা দফতরের একটি সিদ্ধান্তে। যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদে রয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, আইনি জটিলতায় সেই কলেজের পরিচালন সমিতিই ছিল না দীর্ঘ দিন। সব জটিলতা মিটিয়ে দিয়ে নতুন করে পরিচালন সমিতি গঠন করে দিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দফতর। পরিচালন সমিতির সম্পাদক করা হল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেই।
চলতি বছরের অগস্টেই মধ্য কলকাতার মিল্লি আল-আমিন কলেজ (ফর গার্লস)-এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার পদ থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। প্রথমে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বৈশাখী সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। তাঁর কলেজের এক শিক্ষিকা তাঁকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অপমান ও হেনস্থা করছেন এবং শিক্ষামন্ত্রী সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ করছেন না— সাংবাদিক সম্মেলনে বৈশাখী এই অভিযোগই তুলেছিলেন। পার্থ সে অভিযোগ পত্রপাঠ নস্যাৎ করেন। পরে পার্থর বাড়ি গিয়ে বৈশাখী ইস্তফাপত্র জমা দেন। কিন্তু পার্থ সে ইস্তফাও নেননি। বৈশাখীকে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে, সব অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।
পার্থর এই আশ্বাসে যে শোভন-বৈশাখীর বিজেপি যাত্রা আটকে গিয়েছিল, তা কিন্তু নয়। শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পাঁচ দিন পরেই শোভন ও বৈশাখী বিজেপিতে যোগ দেন। পরবর্তী কয়েক মাসে বিজেপির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কোন পথে এগিয়েছে, তা অবশ্য রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরের অজানা নয়। ভাইফোঁটার দিন সকলকে চমকে দিয়ে মমতার বাড়িতে শোভন-বৈশাখীর হাজির হওয়া বা মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন মেয়রের হাজির হওয়া— এমন একের পর এক ঘটনাও তৃণমূলের সঙ্গে শোভনের দূরত্ব কমে আসার আভাসই দিচ্ছিল। তবে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথম থেকেই বৈশাখীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার বিষয়ে তৎপর ছিলেন। মিল্লি আল-আমিন কলেজের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তিনি করতে শুরু করেছিলেন আগেই। শোভন-বৈশাখীর বিজেপিতে চলে যাওয়া বা পরে আবার মমতার সঙ্গে তাঁদের নৈকট্য বাড়ার জেরে কলেজের জটিলতা নিরসনের প্রক্রিয়া কখনও বিলম্বিত বা তরান্বিত হয়নি বলেই শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ছ’মাসেই ঘুরে দাঁড়িয়ে চাঙ্গা তৃণমূল, তোলপাড় শুরু বিজেপিতে, এনআরসির পরোক্ষ শিকার বাম-কংগ্রেসও
সেই প্রক্রিয়া এ বার চূড়ান্ত হওয়ার পথে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদে থাকছেন, তা নিয়ে সংশয় আগেই কেটে গিয়েছিল। এ বার স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর আমিরুদ্দিন ববিকে সভাপতি এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্পাদক পদে বসিয়ে কলেজের পরিচালন সমিতি তৈরি হওয়ায় আরও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সমস্যা কেটে যাওয়ার পথে।
আরও পড়ুন: এনআরসি আতঙ্ক থেকে বেহাল অর্থনীতি, গোটা দেশের খণ্ডচিত্র রাজ্যের উপনির্বাচনে? উঠছে প্রশ্ন
কলেজের সমস্যা সমাধানের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি। সম্প্রতি তিনি বেশ কয়েক বার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। তার সঙ্গেও রাজনীতির কোনও সম্পর্ক ছিল না বলে বৈশাখী বার বার জানাচ্ছিলেন। তিনি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন— এমনই দাবি করছিলেন বৈশাখী। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্য প্রণোদিত নিষ্ক্রিয়তার কারণেই যে জটিলতা ক্রমশ বাড়ছে বলে এক সময়ে শোভন-বৈশাখী একযোগে অভিযোগ করেছিলেন, সেই জটিলতা গত এক মাসে যে রকম মসৃণ ভাবে কেটে গেল এবং যে ভাবে কলেজটির উপরে বৈশাখীর নিয়ন্ত্রণকে আরও প্রতিষ্ঠা দিল শিক্ষা দফতর, তার নেপথ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy