মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এসে বিধান পরিষদ গঠন করবে তাঁর নতুন সরকার। তৃণমূল এ বার দলের অনেক প্রবীণ বিধায়ককেই প্রার্থী করেনি। তাঁদের বিধান পরিষদে জায়গা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মমতা। তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার দু’মাসের মধ্যেই সেই উদ্যোগ নিল তৃণমূল। যদিও, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই সে বছরের অগস্টে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। তারপরেবিধান পরিষদ গঠনে অ্যাড হক কমিটি তৈরি হয়। এখন সেই কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আগামী বিধানসভা অধিবেশনেই সরকার আলোচনা করতে চাইছে বলে সোমবার জানিয়েছেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
কিন্তু কেমন এই বিধান পরিষদ? কারা সেখানে মনোনীত বা নির্বাচিত হতে পারেন? কারাই বা ভোট দিতে পারেন?
কেন্দ্রে যেমন লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যসভা রয়েছে তেমনই রাজ্যে বিধানসভার পাশাপাশি বিধান পরিষদ রাখা যায়। সংবিধানের ১৬৯ অনুচ্ছেদে এই সুযোগ দেওয়া রয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের ছ’টি রাজ্যে বিধান পরিষদ রয়েছে— অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, বিহার, তেলঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশ।
কী ভাবে বিধান পরিষদ গঠিত হবে তা সবিস্তারে বলা হয়েছে সংবিধানের ১৭১ অনুচ্ছেদে। আইন বলছে, কোনও রাজ্যের বিধানসভায় যত আসন তার এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আসন হতে পারে বিধান পরিষদে। তবে ছোট রাজ্যের ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা ৪০ পর্যন্ত হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার আসন সংখ্যা ২৯৪। এর এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৯৮ জন সদস্য থাকতে পারবেন প্রস্তাবিত বিধান পরিষদে।
কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স্ক কোনও ভারতীয় নাগরিক বিধান পরিষদের প্রার্থী বা মনোনীত হতে পারেন। তবে বিধায়ক বা সাংসদ থাকার সময়ে কেউ সেই সুযোগ পাবেন না।
বিধান পরিষদের সদস্যদের মেয়াদ হয় ছ’বছরের। রাজ্যসভার মতোই বিধান পরিষদেও প্রতি দু’বছর অন্তর সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ অবসর নেবেন।
বিধান পরিষদের সদস্য নির্বাচনের নিয়মও অনেকটাই জটিল। মোট পাঁচটি পদ্ধতিতে বাছা হয় সদস্যদের।
মোট সদস্যের এক তৃতীয়াংশকে নির্বাচিত করেন পুরসভা, জেলা পরিষদের মতো স্থানীয় প্রশাসনের জনপ্রতিনিধিরা।
অন্য এক তৃতীয়াংশকে নির্বাচিত করেন বিধানসভার সদস্যরা। এর ফলে শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়ক সংখ্যার উপরে নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দলের বিধান পরিষদের সদস্য সংখ্যা।
মোট সদস্যের ১২ ভাগের এক ভাগ নির্বাচিত হন রাজ্যের স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ভোটে।মোট সদস্যের আরও ১২ ভাগের এক ভাগ নির্বাচিত হন রাজ্যের শিক্ষকদের ভোটে। তবে, স্নাতক এবং শিক্ষকদের জন্য আলাদা করে ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথাই আইনে রয়েছে।
বাকি সদস্যদের মনোনয়ন দেবেন রাজ্যপাল। তিনি সদস্য বাছবেন সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সমাজকর্মী-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতিদের মধ্য থেকে।
নির্বাচনের নিয়মও লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের মতো নয়। রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচনের মতো ‘সিঙ্গল ট্রান্সফারেবল ভোট’ ব্যবস্থার কথা বলা রয়েছে সংবিধানে। এক জন ভোটার একাধিক ব্যক্তিকে পছন্দ অনুযায়ী ১, ২, ৩ ইত্যাদি নম্বরের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন।
ভোট গণনার নিয়মও আলাদা। এক জন প্রার্থীকে জিততে হলে সর্বনিম্ন নির্দিষ্ট সংখ্যার প্রথম পছন্দের ভোট পেতেই হবে। সেটা হল মোট ভোটারের অর্ধেকের থেকে এক বেশি।
প্রথম রাউন্ড গণনায় যদি দেখা যায় কোনও প্রার্থী ওই সংখ্যক প্রথম পছন্দের ভোট পাননি তবে দ্বিতীয় রাউন্ড গণনা হবে। প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে কম ভোট যিনি পেয়েছেন তাঁকে পরাজিত ধরে তাঁর পাওয়া প্রথম পছন্দের ভোট বাকিদের মধ্যে ভাগ হবে। বাকিরা যে অনুপাতে প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন সেই অনুপাতেই হবে ভাগ। এর পরে সেরা বাছা হবে।
একটি আসনে কত জন প্রার্থী তার উপরে নির্ভর করছে কত রাউন্ড গণনা হবে। যতক্ষণ নির্দিষ্ট সর্বনিম্ন প্রথম পছন্দের ভোট কেউ না পাচ্ছেন ততক্ষণ গণনা চলবে।
অল্প সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সহজ হলেও এক সঙ্গে অনেক আসন এবং অনেক প্রার্থী হলে তা রীতিমতো জটিল হয়ে যায়। তবে লোকসভা ও রাজ্যসভা অনুমোদন না দিলে বিধান পরিষদ গঠন করা যায় না। তাই রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল পাশ করিয়ে নিলেও কেন্দ্রে শাসকদল বিজেপি-র উপরেই নির্ভর করছে এর ভবিষ্যৎ। নিয়ম অনুযায়ী বিধান পরিষদের প্রথম অনুমোদন দেবেন রাজ্যপাল। এর পরে সংসদের দুই কক্ষের অনুমোদন পেলে তা যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রপতিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy