প্রতীকী ছবি।
যেখানে বছরের অনেক সময়েই রক্তের ‘সঙ্কট’ থাকে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত এখন পর্যাপ্ত। তৃণমূল সূত্রের দাবি, পরিস্থিতির পিছনে রয়েছে রক্তদান শিবির আয়োজন করা নিয়ে বর্ধমান শহরে দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ‘স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা’। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলে কোন্দল নেই। রক্তদান শিবির করছেন সবাই। সমাজের উপকার হচ্ছে।’’ তবে দলের জেলা স্তরের আর এক নেতার দাবি, “এই দ্বন্দ্বের খবর রাজ্য নেতৃত্ব জানেন। দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে রাজ্য স্তরে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে দুই মন্ত্রীকে।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক মাসে বর্ধমান মেডিক্যালে রক্তের চাহিদা থাকে কম-বেশি ২,৪০০ ইউনিট। মাস দু’য়েক আগে হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। রক্ত জোগান দিতে সরকারি আধিকারিক, পুলিশকর্মীরা শিবির করেন। এগিয়ে আসে সামাজিক সংগঠনগুলিও। গত মে মাসে বর্ধমান শহরে ন’টি রক্তদান শিবির করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রক্ত মিলেছিল ৪৩৭ ইউনিট।
জুন মাসে অবশ্য ৫৯টি শিবির হয়েছে। সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ কম-বেশি ৩,২০০ ইউনিট। ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, সরাসরি তৃণমূলের উদ্যোগে অন্তত গোটা ৩০টি শিবির হয়েছে। শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত অনেক সংগঠনের উদ্যোগে আরও প্রায় ২০টি শিবির হয়েছে। হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্তর দাবি, “ব্লাডব্যাঙ্কে এখন রক্তের পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। এটা একই সঙ্গে বিস্ময় ও স্বস্তির বিষয়।’’
তবে তৃণমূলের অন্দরে যাঁরা রক্তদান শিবিরের ‘রহস্য’ জানেন, তাঁরা তত বিস্মিত নন। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা মানছেন, বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরে, বর্ধমান শহরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ‘কোন্দল’ বেড়েছে। সম্প্রতি শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক ব্যক্তি যুব তৃণমূল আয়োজিত রক্তদান শিবিরে যাওয়ায় তাঁর উপরে দলের অন্য এক ‘গোষ্ঠীর’ লোকজন হামলা করে বলে অভিযোগও উঠেছিল।
এলাকাবাসীও দেখেছেন, বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের অনুগামীরা পাড়ায়-পাড়ায় রক্তদান শিবির করেছেন। খোকন-গোষ্ঠীর দাবি, প্রায় ২০টির মতো রক্তদান শিবির হয়েছে। পিছিয়ে নেই ‘খোকন-বিরোধী’ বলে দলের অন্দরে পরিচিত জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি রাসবিহারী হালদার-সহ অন্য নেতারা। তাঁদের দাবি, কোথাও যুব তৃণমূলের নামে, কোথাও শহর তৃণমূলের নামে বর্ধমান শহরে অন্তত ১০টি জায়গায় রক্তদান শিবির হয়েছে। দু’পক্ষই রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি, দুঃস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিলিও করেছে।
খোকনবাবু এবং রাসবিহারীবাবুর অবশ্য দাবি, দলের অন্দরে ‘কোন্দল’ বা ‘প্রতিযোগিতা’ নেই। রক্ত সঙ্কটের পরিস্থিতি কাটাতে দলের নির্দেশ মেনে এবং সামাজিক কর্তব্য পালনে রক্তদান শিবির হচ্ছে।
রক্ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কেতুগ্রামের বাসিন্দা বিভু আচার্য বলেন, ‘‘বর্ধমান মেডিক্যালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত পাওয়া খুব কঠিন। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর প্রতিযোগিতায় ব্লাডব্যাঙ্ক ফুলে ফেঁপে উঠলে মানুষের মঙ্গল।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘প্রতিযোগিতার দৌলতে যেন ব্লাডব্যাঙ্কের সঞ্চয়ক্ষমতার অতিরিক্ত রক্ত নেওয়া না হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy