শোকাহত: ডেঙ্গিতে মৃত চায়না ঘোষের পরিজনেরা। পুরাতন মালদহে। —নিজস্ব চিত্র।
পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর পাড়াদিঘি গ্রামের বধূ চায়না ঘোষ বৃহস্পতিবার ডেঙ্গিতে মারা যান। তাঁকে যে দিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সে দিন তাঁর ছোট মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত মুনমুনকেও সেখানে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর আতঙ্কে ওই দিনই হাসপাতাল থেকেই মুনমুনকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। রাতে চায়নাদেবীর অন্ত্যেষ্টি হওয়ার পর শুক্রবার সকালে তাঁকে মালদহের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। এ দিন দুপুর থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন চায়নাদেবীর একমাত্র ছেলে অরবিন্দও। ফলে চায়নাদেবীর স্বামী মনোরঞ্জন ঘোষ সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা রীতিমতো দিশাহারা।
শুধু এই পরিবারই নয়, পাড়াদিঘি গ্রামের ঘরে ঘরে এখন জ্বর। চায়নাদেবীর প্রতিবেশী চণ্ডী মণ্ডল ও গায়ত্রী ঘোষও জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গিতে চায়নাদেবীর মৃত্যুতে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
মালদহ জেলা সদর থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ১৫ কিলোমিটার দূরে ভাবুক পঞ্চায়েতের সেই গ্রাম পাড়াদিঘি। এখানেই বাড়ি মনোরঞ্জন ঘোষের। তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। মনোরঞ্জনবাবু জানালেন, স্ত্রী ও ছোট মেয়ে ২২ তারিখ থেকে জ্বরে আক্রান্ত। প্রথমে স্থানীয় হাতুড়েদের কাছ থেকেই ওষুধ এনে খাওয়ান। কিন্তু বাড়াবাড়ি হলে পরেরদিন মৌলপুর হাসপাতালের এক ডাক্তারের পরামর্শে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী মারা যান। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর মৃত্যুর পর মেয়েকেও হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এদিন একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেছি। দুপুর থেকে ছেলেরও জ্বর কী করব তা ভেবেই পাচ্ছি না।’’
চায়নাদেবীর মৃত্যুর খবর রটতেই ডেঙ্গি আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে গ্রামে। ওই পাড়ার বাসিন্দা সুজিত ঘোষ, খগেন ঘোষ, রতন ঘোষদের অভিযোগ, পাড়ায় ঘরে ঘরে জ্বর। বিকেল লাগতেই এলাকায় শুধু মশা আর মশা। অথচ মশা মারতে কোনও উদ্যোগ পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের নেই। এত জ্বরের রোগী অথচ স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা মেলে না। সরকারি ব্লক হাসপাতাল ১০ কিলোমিটার দূরে তাই বাধ্য হয়ে হাতুড়েদেরই দেওয়া ওষুধই খাচ্ছেন জ্বরে আক্রান্তরা।
যদিও ডেঙ্গিতে চায়নাদেবীর মৃত্যুর পরেই টনক নড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। এ দিন দুপুর থেকে স্বাস্থ্য কর্মী থেকে শুরু করে পুরাতন মালদহ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌভিক দাসের নেতৃত্বে মেডিক্যাল টিম এলাকায় গিয়েছে। মৃতার পরিবারের জ্বরে আক্রান্ত সদস্যদের রক্তের নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি আশেপাশের বাসিন্দাদের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈয়দ শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘‘এ বছর এই প্রথম জেলায় কোনও রোগী ডেঙ্গিতে মারা গেলেন। এ দিন পাড়াদিঘি এলাকায় মেডিক্যাল টিম গেছে, জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা করে পদক্ষেপ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy