বাড়িতে ক্য়ানসার আক্রান্ত শুভ্রা দাস সরকার। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ক্যানসারে আক্রান্ত এক প্রৌঢ়া ও তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়িকে পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে দিয়ে অচৈতন্য করার পরে নগদ চার লক্ষ টাকা ও সোনার গয়না লুট করার অভিযোগ উঠল সেই বাড়িরই প্রাক্তন আয়া এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে হরিদেবপুর থানার সোদপুর রোডের মন্দিরবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে। অভিযুক্ত সঞ্জু সরকার ও তার স্বামী বৈদ্যনাথ সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সেই সন্ধ্যায় বাড়িতে ছিলেন ক্যানসারে আক্রান্ত ৫৮ বছরের শুভ্রা দাস সরকার ও তাঁর ৮৩ বছরের শাশুড়ি রমা দাস। শুভ্রার স্বামী অভিজিৎ দাস বাড়িতে ছিলেন না। অভিজিতের বিবাহিতা বোন অনিন্দিতা দাস বাড়ির কাছেই থাকেন। মাঝেমধ্যেই তিনি দাদার বাড়িতে অসুস্থ মা ও বৌদিকে দেখতে আসেন। সে দিন সন্ধ্যায় তিনি দাদার বাড়িতে আসার পরেই ঘটনার কথা জানতে পারেন। বুধবার অনিন্দিতা জানান, সঞ্জু তাঁর দাদার বাড়িতে আগে আয়ার কাজ করত। দু’মাস কাজ করার পরে পুজোর আগে সে কাজ ছেড়ে দেয়। অনিন্দিতা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন দাদার বাড়িতে যাই, তখন দেখি, বসার ঘরের সোফায় মা ও বৌদি অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। দেখেই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। আমার বৌদি ক্যানসার রোগী। কেমোথেরাপি চলছে। মা ও বৌদির ওই অবস্থা দেখে আশপাশের আত্মীয়দের চিৎকার করে ডাকি।’’
অনিন্দিতা জানান, সে দিন সন্ধ্যায় দাদার বাড়িতে সঞ্জু এসেছিল স্বামীকে নিয়ে। তাদের বসতে বলা হয়। সঞ্জু শুভ্রা ও রমার সঙ্গে গল্প শুরু করে। এর পরে সে রমার জন্য চা এবং শুভ্রার জন্য দুধ জাতীয় একটি পানীয় তৈরি করে দেয়। ওই চা এবং পানীয় খেয়েই তাঁরা অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তার পরে আর কিছু মনে নেই তাঁদের। সেই সন্ধ্যায় আতঙ্কিত অনিন্দিতার ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে আসেন অভিজিৎ। শোয়ার ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, আলমারির পাল্লা খোলা। ভিতরে রাখা চার লক্ষ টাকা এবং কিছু গয়না উধাও। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন তিনি। অনিন্দিতা বলেন, ‘‘বৌদির চিকিৎসা চলছেরাজারহাটের একটি ক্যানসার হাসপাতালে। ওঁকে কেমোথেরাপি এবং একটি খুব দামি ওষুধ দেওয়ার কথা ছিল দু’দিনের মধ্যে। তাই চার লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে বাড়িতে রাখা হয়েছিল।’’
অনিন্দিতা জানান, সঞ্জুর তাঁদের বাড়িতে আসা এবং সে দিনই এই ঘটনা ঘটায় সঞ্জুকেই সন্দেহ হয় তাঁদের। তাকে ফোন করে বাড়িতে ডাকা হয়। সঞ্জু তাঁদের বাড়িতে আসতে প্রথমে অস্বীকার করলে তাকে বলা হয়, না এলে তার বাড়িতে পুলিশ যাবে। শুনে সঞ্জু তাঁদের বাড়িতে আসে। তত ক্ষণে হরিদেবপুর থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ সঞ্জুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সব কথা জানা যায়। পরে স্বামী বৈদ্যনাথ-সহ সঞ্জুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ দিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অচৈতন্য হয়ে পড়ার জেরে তখনও অসুস্থ বোধ করছেন শুভ্রা ও রমা। অনিন্দিতা বলেন, ‘‘বৌদির চিকিৎসার প্রচুর খরচ। এই অবস্থায় এ ভাবে টাকা লুট হল! শুনেছি, দু’লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। তা হলে বাকি টাকা ও গয়না কোথায় গেল?’’ অনিন্দিতা জানান, তাঁরা এক জন পরিচিতের মাধ্যমে সঞ্জুকে নিয়োগ করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জু ও বৈদ্যনাথ এমন ঘটনা আগেও ঘটিয়েছে। বাকি টাকা ও গয়না উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বাড়িতে কাউকে নিয়োগ করলে তাঁর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য থানায় জানিয়ে রাখতে বার বার বলা হয়। কিন্তু এই সচেতনতা বেশির ভাগ মানুষেরই নেই।।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy