ফাইল চিত্র।
কালাজ্বর নির্মূল প্রকল্পে স্বাস্থ্য দফতরের কাজ পেতে পারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তাই উৎসাহের অন্ত ছিল না। দিল্লি থেকে জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দল রাজ্যের কোন ব্লকে, কবে-কোথায় পরিদর্শনে যাবেন, তার পর স্বাস্থ্য ভবনের সচিব স্তরে বৈঠক কখন হবে— সব নির্ঘণ্ট তৈরি। শেষ মুহূর্তে সেই সম্ভাবনা ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে রাজ্যের এই পরিদর্শন কর্মসূচির শরিক হওয়ার কথা ছিল। স্বাস্থ্য দফতরের ‘শীর্ষ স্তরের আপত্তি’তে শেষ মুহূর্তে পরিদর্শন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া নিয়ে দোটানায় ভুগছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পরিদর্শন হচ্ছে, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। হবে কি না, তা-ও বলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্তরে কথাবার্তা চলছে। দেখা যাক কী হয়!’’
এই কর্মসূচির জন্য নবান্নের অনুমোদন চেয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কাছে বার্তা আসে, আপাতত পরিদর্শন হচ্ছে না। পরিদর্শনের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে সেই বার্তা মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। আচমকা এমন সিদ্ধান্ত কেন, তা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের কেউ মুখ খোলেননি। তবে দফতরের একাংশের দাবি, দিল্লির ‘অভিভাবকত্বে’ এ ধরনের পরিদর্শনে সায় নেই রাজ্যের।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘দিল্লি যোগ থাকলেই অনুমতি না-পাওয়ার গেরোয় আটকে যাওয়া নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত, ডেঙ্গির তথ্য কেন্দ্রকে না দেওয়া তারই প্রমাণ। এ বার সেই তালিকায় কালা জ্বরেরও চলে আসা দুর্ভাগ্যজনক। অনেক কিছু শেখার ছিল। পরিদর্শন বাতিল হলে বিশ্বের কাছে রাজ্যেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’’
কালাজ্বর কী?
• কালা এবং আজর, এই দুই হিন্দি শব্দের সন্ধি হল কালাজ্বর। কালা মানে কালো। হিন্দিতে আজর শব্দের অর্থ ব্যাধি। কালাজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কালচে ভাব দেখা যায়। তাই এরকম নাম।
রোগের বাহক
• লিসমেনিয়া গোত্রের প্রোটোজোয়া নামের এক পরজীবী বাহিত রোগ হল কালাজ্বর। এদেশে এই রোগের বাহক হল স্ত্রী বেলেমাছি।
লক্ষণ
• দু’সপ্তাহ ধরে মাঝেমধ্যেই জ্বর আসা। ওজন কম। খিদে কমে যাওয়া। প্লীহা-যকৃতের আকার বৃদ্ধি এবং রক্তাল্পতা। চিকিৎসকদের মতে, দু’সপ্তাহের উপরে জ্বরে অন্য কিছু পাওয়া না গেলে কালা জ্বরের পরীক্ষা করানো উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২০ সাল ভারত থেকে কালাজ্বর নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা। এ দেশে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের মোট ৫৪টি জেলা কালাজ্বর প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। ১৬ বছর আগে ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনভিবিডিসিপি) তত্ত্বাবধানে কালা জ্বর নির্মূল কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচির ‘স্টেকহোল্ডার’এর তালিকায় রয়েছে রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (পটনা), লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন, ড্রাগস ফর নেগলেকটেড ডিজ়িজেস ইনিশিয়েটিভ-সহ ১২টি সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জেলার ১২০টি ব্লক এই প্রকল্পের অধীন। নির্মূল কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হল, ব্লক স্তরে প্রতি দশ হাজার জনসংখ্যায় বেলেমাছি বাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা একের নীচে নামিয়ে আনা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড না পারলেও পশ্চিমবঙ্গ এ কাজে একশো শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর।
সেই কাজের মূল্যায়নে (ইনডিপেনডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট) এনভিবিডিসিপি’র তত্ত্বাবধানে ১২ জনের জাতীয়-আন্তর্জাতিক স্তরের বিশেষজ্ঞদের আগামিকাল, বুধবার এ রাজ্যে আসার কথা। সূত্রের খবর, সোমবার দিল্লির কনট প্লেসে এ সংক্রান্ত একটি আলোচনাসভায় এ রাজ্যের এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘আপত্তি’র জেরে তা হয়নি। বুধবার বিশেষজ্ঞদের একটি দল যাওয়ার কথা দার্জিলিংয়ে। আর একটি দলের ‘ফিল্ড ভিজিট’ করার কথা উত্তর দিনাজপুর, মালদহ এবং রায়গঞ্জে। ‘ফিল্ড ভিজিটে’ কী পাওয়া গেল, তা নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড় ঘণ্টা স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ডিরেক্টরের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা। তবে আপাতত সবই অনিশ্চিত বলে সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy