সোহরাব হোসেনের সেই অট্টালিকা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
ভেবেছিলেন প্রশংসা পাবেন বিস্তর। কিন্তু হল ঠিক উল্টোটা!
এই ৫৮ বছর বয়সে শেখ সোহরাব হোসেনের নিজের দেওয়া তথ্য বলছে, তিনি অন্তত ১২ বিঘা জমি, তিনটি মিনি ডিপ টিউবওয়েল, একটি গাড়ি, একটি ট্র্যাক্টর, দু’টি মোটরবাইক, একটি পাকা দোকানঘর এবং নীল-সাদা তিন তলা বাতানুকূল অট্টালিকার মালিক। তৃতীয় তথা বর্তমান স্ত্রীর জন্য আরও একটা বাড়ি বানাচ্ছেন।
অষ্টম শ্রেণি পাশ সোহরাব কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ছোটখাটো দর্জি হিসেবে। এখন হুগলির আরামবাগের তৃণমূল পরিচালিত আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁর নামে নানা অভিযোগ শোনা যায়। তার কিছু থানা-পুলিশ পর্যন্তও গড়িয়েছে।
বাম আমল থেকে সাতমাসা এলাকায় ওই তিন তলা বাড়ি বানানো শুরু করেছিলেন। এখনও শেষ হয়নি বলে সোহরাবের দাবি। কিন্তু সেটা নিয়ে নয়, সোহরাবের আক্ষেপ, ‘‘নিজের কেরামতিতে জীবনে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ভেবেছিলাম প্রশংসা পাব। বড় বাড়িটা করে কাল হল দেখছি। লোকে নানা প্রশ্ন তুলছেন।’’
২০১৩ সালে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন সোহরাবের প্রথম স্ত্রী আকলিমা বেগম। তার বেশ কিছু দিন আগে আগে পর্যন্ত পুরা বাজারে ছিটেবেড়ার একচিলতে ঘরে দর্জির কাজ করতেন সোহরাব।
সোহরাবের বিরুদ্ধে আমপান-ঝড়ে হেলে পড়া শ’তিনেক গাছ বেআইনি ভাবে বিক্রির অভিযোগ তুলেছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশই। সেই ঘটনায় দল সোহরাবকে শোকজ় করেছিল। তার পরেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। ইয়াস-ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ সরকারি ত্রিপল নয়ছয় নিয়েও বিডিওর কাছে সোহরাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যদেরই একাংশ। ব্লক প্রশাসন তদন্তে নেমে সেই সব ত্রিপল উদ্ধার করে।
এ সব অভিযোগকে গুরুত্ব দেননি সোহরাব। সম্পত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পরিশ্রম ও মাথা খাটিয়ে তিল তিল করে করেছি। দর্জির কাজ করার পাশাপাশি আমি জমির দালালি এবং বিভিন্ন মানুষের মামলার কাজে সহায়তা করেও টাকা কামিয়েছি। আর চাষের আয় আছে। প্রায় ২৫-৩০টি মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছিল। তিন বার দেড় মাস করে জেল খেটেছি। এখন খালি কিছু দেওয়ানি মামলা রয়ে গিয়েছে।”
সরকার পঞ্চায়েত প্রধানদের কত টাকা সাম্মানিক দেয়, সেটা ঠিকঠাক বলতে পারেন না সোহরাব। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে সরাসরি আয় হয় না কি! তবে, আয় করার ঘাঁতঘোঁত প্রচুর। যাঁর যেমন সততার মাপকাঠি, তিনি তেমন করেন। কমিশনের নানা মাপকাঠি রয়েছে। প্রধানদের প্রভাবটাও কম কথা নয়।’’
নানা সময়ে সোহরাবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ওয়াকিবহাল তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক দিলীপ যাদব বলেন, “বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই দলের নির্দেশে তাঁকে শোকজ় করা হয়েছিল। সতর্ক করা হয়েছিল। তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
নীল-সাদা বাড়ির একতলার বৈঠকখানায় গদিমোড়া চেয়ারে বসে সোহবার দাবি করছেন, তিনি শান্তির পক্ষে। সততার পক্ষে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy