বিমল গুরুঙ্গ ও হরকাবাহাদুর ছেত্রী
সাংগঠনিক শক্তি নেই বলে বারবার মোর্চার অন্দরে তাচ্ছিল্য জুটেছিল হরকাবাহাদুর ছেত্রীর। দলত্যাগের পরে সেই হরকাবাহাদুরের নয়া সংগঠনের চাপেই এখন নিজের দলের ভাঙন রুখতে ঘর ছেড়ে পাহাড়ের পথে পথে ঘুরছেন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ।
হরকাবাহাদুরের সংগঠনটি ঠিক কতটা শক্তিশালী, তা টের পাওয়া যাবে আজ, শুক্রবার। মোর্চা ছাড়ার পরে কালিম্পংকে আলাদা জেলার দাবিতে একটি কমিটি গড়েছেন হরকা। আজ দুপুরে কালিম্পংয়ের ডম্বর চকে সেই ‘কালিম্পং জেলা দাবি আদায় কমিটি’র সভা। গত সপ্তাহের গোড়ায় কমিটিটি গড়া হয়েছে। হরকাবাহাদুরের দলত্যাগের পরে কালিম্পঙের মোর্চা নেতা পাসাং তামাঙ্গ সহ ৩০০ জনও মোর্চা ছেড়েছেন। আরও অন্তত কয়েকশো সমর্থক হরকাবাহাদুরকে বাড়িতে গিয়ে বলে এসেছেন, তাঁরা তাঁর পাশে রয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর কালিম্পঙে এক ঘরোয়া সভায় জেলা দাবি আদায় কমিটি গড়ার পরে তার মুখ্য সংযোজক হিসেবে সকলে একবাক্যে হরকাবাহাদুরের নামে সিলমোহরও দিয়েছেন। তা ছাড়া যে ২ জন কমিটির সংযোজক হয়েছেন, তাঁরা হলেন, ইউসুফ শিমিক ও নয়ন প্রধান। ইউসুফ লেপচা উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান। নয়নবাবু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার।
কিন্তু পাহাড়ের রাজনীতিতে এই কমিটিকে কেবল কালিম্পং কেন্দ্রীক একটি আন্দোলনের মুখ হিসেবেই ধরা হচ্ছে না। এই কমিটির প্রধান গুরুত্ব হল, এখানে পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দলগুলি একটি ছাতার তলায় এসেছে। কমিটিতে সামিল হওয়ার কথা জানিয়েছে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, জিএনএলএফ, সিপিআরএম, তৃণমূল, কংগ্রেস সহ পাহাড়ের প্রায় সব মোর্চা বিরোধী দলই। তাই নতুন জেলা গঠনের দাবিকে সামনে রেখে এই কমিটি যে মোর্চা বিরোধীদের একটি মঞ্চই হয়ে উঠতে চলেছে তা একান্তে স্বীকার করেছেন গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ নেতারাও।
হরকা অবশ্য দাবি করেছিলেন, এই কমিটিটি একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কালিম্পংকে আলাদা জেলার দাবি তুলেছি আমরা। তাতে সবাইকে সামিল হতে অনুরোধ করেছি।’’ সেই মতো, মোর্চাকেও এই কমিটিতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। মোর্চা তা এড়িয়ে গিয়েছে। জেলার দাবিকে সমর্থন করলেও ডম্বর চকের সভায় তাঁরা যাবেন কি না, সেই প্রশ্নও এড়িয়ে গিয়েছেন মোর্চা নেতারা। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা তথা গুরুঙ্গ ঘনিষ্ঠ বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘কালিম্পংকে জেলা ঘোষণা করার দাবি আমরাও জানিয়েছি। জেলার দাবি আদায়ের কমিটি গঠনকেও স্বাগত জানাই। তবে কমিটির থেকে লিখিত ভাবে কোনও আমন্ত্রণ না মিললে, এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
কিন্তু আলাদা জেলার দাবিতে মোর্চা বিরোধীদের কথায় ঝাঁজ অনেক বেশি। গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি যেমন বলেন, ‘‘বিধানসভার আগামী অধিবেশনেই কালিম্পংকে আলাদা জেলা করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী জানান, জেলার রূপরেখা কেমন হবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
দার্জিলিং পাহাড় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ প্রধান বলেন, ‘‘আমরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।’’
গুরুঙ্গের আচরণেও বেশ বোঝা যাচ্ছে, তাঁর উপরে হরকার কমিটির চাপ তৈরি হয়েছে। মরিয়া গুরুঙ্গ ঘোষণা করেছেন, ‘‘যত দিন আলাদা রাজ্যের দাবি আদায়ের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত না মেলে, বাড়ি যাব না।’’ যা শোনার পরে মুচকি হাসছেন কালিম্পঙের দলত্যাগী বিধায়ক। অতীতে গুরুঙ্গ ‘গোর্খাল্যান্ড’ না হলে কী কী করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন তা হরকাবাহাদুর মনে করিয়ে দিচ্ছেন আশেপাশের লোকজনকে।
এই অবস্থায় শাসক দল তৃণমূল কী করে, তার দিকে নজর রেখেছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ ঘেঁষা লেপচারা হরকাবাহাদুরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নভেম্বরের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার পাহাড়ে আসার কথা। পাহাড়ের প্রবীণ রাজনীতিকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাম আমলে গুরুঙ্গ প্রচ্ছন্ন সমর্থন পেয়েছিলেন শাসক দলের কাছ থেকে। তাঁদের দাবি, শাসক দলের সমর্থন না থাকলে, গুরুঙ্গের পক্ষে সুবাস ঘিসিঙ্গকে পাহাড়ে উঠতে বাধা দেওয়া তখন সম্ভব ছিল না। এ বারও শাসক দল পাহাড়ে ক্ষমতাসীন দলের বিরোধিতাই করতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।
সেই আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘই যে গুরুঙ্গকে ঘর ছাড়া করেছে, তা নিয়ে সংশয় নেই মোর্চার অনেকেরও। তাই দল ছাড়ার পরে প্রথম রাউন্ডের লড়াই অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন হরকাবাহাদুর। এ বার জনসভায় ভিড় কেমন হবে, তার উপরে নির্ভর করছে দ্বিতীয় রাউন্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy