Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Higher Secondary Results 2020

জুতো সেলাই থেকে সফল পাঠ, উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ পেল হরিশ্চন্দ্রপুরের সঞ্জয়

করোনার জেরে এ বছর মাঝপথে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সঞ্জয়ের ভূগোল পরীক্ষা আর হয়নি। তিনি ফের বসেছিলেন জাতীয় সড়কের ধারে, জুতো সেলাইয়ের সরঞ্জাম নিয়ে।

ফল বেরোনোর পরের দিনও জুতো সেলাই করছেন সঞ্জয়। নিজস্ব চিত্র

ফল বেরোনোর পরের দিনও জুতো সেলাই করছেন সঞ্জয়। নিজস্ব চিত্র

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০৫:১৫
Share: Save:

বাপ মরা ছেলে সঞ্জয় রবিদাস ছোটবেলা থেকেই দিনমজুর মা আর শিশুশ্রমিক দাদার সঙ্গে রোজগারে হাত লাগিয়েছিলেন। জুতো সেলাই করতেন দুই ভাই। সেই টাকা লাগত তাঁদের সংসারে, পড়াশোনাতেও। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বার হতে তিন জনের মুখেই হাসি। ৯০ শতাংশ পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর কনুয়া হাইস্কুলে প্রথম হয়েছেন সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘‘ইংরেজি নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়ার ইচ্ছে আছে।’’ তবে সে জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে, তা খুব স্পষ্ট নয় তাঁদের কাছে।

সঞ্জয়দের বাড়ি মালদহের চাঁচলে। তাঁর যখন দেড় বছর বয়স, মারা যান বাবা জগদীশ। পঞ্জাবে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে অথৈ জলে পড়েন জগদীশের স্ত্রী কল্যাণী। অন্যের জমিতে ধান কেটে, দিনমজুরি করে কোনও মতে টেনেছেন সংসার। একটু বড় হয়ে মাকে সাহায্য করতে কাজে নেমে পড়েন সঞ্জয়। দাদা সাগরের সঙ্গে মিলে জুতো সেলাই করতেন। সঙ্গে চলত পড়াশোনা। সঞ্জয় তখন সপ্তম শ্রেণি। মাধ্যমিক পাশ করে পড়াশোনা ছেড়ে সাগর চলে যান ভিন‌্ রাজ্যে, শ্রমিকের কাজ নিয়ে। এখন অবশ্য করোনার ধাক্কায় তিনি কর্মহীন হয়ে বাড়িতেই।

করোনার জেরে এ বছর মাঝপথে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সঞ্জয়ের ভূগোল পরীক্ষা আর হয়নি। তিনি ফের বসেছিলেন জাতীয় সড়কের ধারে, জুতো সেলাইয়ের সরঞ্জাম নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘সংসারের খরচ আছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পড়তে গেলেও টাকা লাগবে।’’ সে খবর চাউর হতে চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য নিজে সঞ্জয়ের বাড়িতে যান। তাঁর মায়ের জন্য বিধবা ভাতার বন্দোবস্ত করেন। সঞ্জয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল শুনে সমীরণ বলছেন, ‘‘খুব ভাল খবর। ভবিষ্যতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখবে প্রশাসন।’’

আরও পড়ুন: জেদেই জয়ী অ্যাসিড আক্রান্ত রূপতাজ, বিজ্ঞান বিভাগে ৭৩ শতাংশ

এত দিন পঞ্চায়েতে আবেদন করেও যে ভাতা পাননি কল্যাণী, বিডিও-র এক কথায় তা হয়ে গেল। দেখে কিছুটা বিস্মিত সঞ্জয়। ঠিক করেছেন, মানুষের পাশে দাঁড়াতে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আমলা হবেন। কনুয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা চৌধুরী বলেন, ‘‘ও যা ফল করেছে তাতে আমরা
সকলেই খুশি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Results 2020 Chanchal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy