Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Nirbhaya

নির্ভয়া-কাণ্ডে অপরাধীদের নিজের হাতেই ফাঁসি দিতে চান নাটার ছেলে মহাদেব মল্লিক

নির্ভয়া-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের নিজের হাতেই ফাঁসি দিতে চাইছেন তিনি। কিন্তু এই বয়সে এসে সে কাজ করা কী সম্ভব? মহাদেবের পাল্টা দাবি, ‘‘আমি তো শারীরিক ভাবে একেবারেই সুস্থ।’’

নাটা মল্লিকের ছেলে মহাদেব মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।

নাটা মল্লিকের ছেলে মহাদেব মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৪১
Share: Save:

নাম, মহাদেব মল্লিক। বয়স, ৫৪। পেশা, কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী।

এ ছাড়াও মহাদেবের আর একটি পরিচয় আছে। তিনি ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিকের ছেলে। ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি হয়। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে সেটাই শেষ ফাঁসির ঘটনা। ওই ফাঁসি দিয়েছিলেন মহাদেবের বাবা নাটা। আর বাবার সহকারীর ভূমিকায় ছিলেন ছেলে মহাদেব। তারও আগে আরও দু’টি ফাঁসিতে বাবার সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন তিনি। এ বার যখন দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে, তখন মহাদেব চাইছেন সেই ঘটনার শরিক হতে। নির্ভয়া-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের নিজের হাতেই ফাঁসি দিতে চাইছেন তিনি। কিন্তু এই বয়সে এসে সে কাজ করা কী সম্ভব? মহাদেবের পাল্টা দাবি, ‘‘আমি তো শারীরিক ভাবে একেবারেই সুস্থ।’’

নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসির নির্দেশ যে কোনও দিন কার্যকর হতে পারে বলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিহারের বক্সার জেলের সুপারের একটি মন্তব্য। সোমবার ওই সুপার জানিয়েছেন যে, তাঁর জেল ফাঁসি দেওয়ার ১০টা বিশেষ দড়ির বরাত পেয়েছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সেগুলি দিতে বলা হয়েছে। জেল সুপার যদিও জানাননি, কী কারণে দরকার ওই দড়ি। তবে ওই জেল সূত্রে খবর, নির্ভয়া কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের ফাঁসির জন্যই চলছে চূড়ান্ত তৎপরতা।

কিন্তু, দড়ি হলেই তো হল না। দরকার পেশাদার ফাঁসুড়েও। তিহাড় জেল সূত্রে খবর, তাঁদের হাতে কোনও পেশাদার ফাঁসুড়ে নেই এই মুহূর্তে। তাই বিভিন্ন রাজ্যে চলছে ফাঁসুড়ের খোঁজ। যদিও ২০১৩ সালে আফজল গুরুর ফাঁসির সময়ও কোনও পেশাদার ফাঁসুড়ে ছিলেন না তিহাড়ে। জেলেরই এক কর্মীকে রাজি করিয়ে ফাঁসির দড়ির হাতল টানা হয়েছিল। কিন্তু তিহাড়ের এক পদস্থ কর্তা স্বীকার করেন যে, পেশাদার ফাঁসুড়ে না থাকলে অনেকটাই ঝুঁকি থেকে যায়। তাই প্রথমে উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি গ্রামে তাঁরা খোঁজ করেছিলেন পেশাদার এবং পারিবারিক ভাবে ফাঁসি যাঁরা দিয়েছেন এমন কোনও লোককে খুঁজে পেতে। কিন্তু তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। তিহাড় জেল সূত্রে খবর, তারা এ রাজ্যের জেলেও পেশাদার ফাঁসুড়ের খোঁজ করেছে।

আরও পড়ুন: ১০টি ফাঁসির দড়ি চাই, নির্দেশ বক্সারের জেলে, নির্ভয়া-কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির গুঞ্জন

আরও পড়ুন: যাদবপুরের এটিএম জালিয়াতি কাণ্ডে দিল্লি থেকে গ্রেফতার ১ রোমানীয়

এ রাজ্যে পেশাদার ফাঁসুড়ে হিসাবে রয়েছেন মহাদেব। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আমি সেই ১৯৯১ সাল থেকে বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। একা কোনও কাজ করিনি। কিন্তু সুযোগ পেলে আমি তিহাড় যেতে চাই।’’ মহাদেব মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘১৯৯১ সালেই একসঙ্গে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি হয়েছিল কার্তিক শীল এবং সুকুমার বর্মণের। আমি বাবার সঙ্গে ছিলাম। দড়ি তৈরি করা থেকে শুরু করে ট্রায়াল দেওয়া— সব করা হয়েছিল। এর পর ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি।’’

মহাদেবের দাদু শিবলাল মল্লিক ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের মাইনে করা ফাঁসুড়ে। কিন্তু এখন ফাঁসির সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরকার কোনও ফাঁসুড়েকে মাইনে করে রাখে না। প্রয়োজনে তাঁদের সাম্মানিক দিয়ে ভাড়া করা হয়। মহাদেবের কথায়, ‘‘নির্ভয়ার সঙ্গে যে জঘন্য অপরাধ ওরা করেছে, ওদের ফাঁসিতে ঝোলাতে পারলে আমার ভাল লাগবে।” দাদু-বাবার কাছ থেকে ‘কাজ’ শিখেছেন মহাদেব। গোটা পদ্ধতিতে কোথাও তাড়াহুড়ো করা উচিত নয় বলেই তাঁর মত। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। পাঁচ দিন ট্রায়াল দিতে হয়। আসামীর শরীরের ওজন এবং উচ্চতা অনুযায়ী তৈরি করতে হয় ফাঁস। খালি ফাঁস তৈরি নয়, সেই ফাঁস আগের দু’দিন ধরে পাকা কলা এবং ঘি মাখিয়ে মসৃণ করতে হয়। সব কিছুর একটা সময় লাগে।”

তবে মহাদেব এ-ও জানেন যে, তিনি চাইলেই তিহাড় যাওয়া হবে না। গোটা পদ্ধতিটাই সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে হয়। রাজ্য কারা দফতরের প্রিন্সিপাল সচিব সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এখনও তিহাড় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ হয়নি।” অন্য দিকে, তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষও কোনও ইঙ্গিত দেননি কবে ফাঁসি হতে পারে বা আদৌ হবে কি না! জেলের তৎপরতা দেখে একটা অংশের অনুমান, রাষ্ট্রপতি অপরাধীদের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসির দিন ঠিক হতে পারে। কারণ, ২০১২ সালে নির্ভয়ার ঘটনাটা ঘটেছিল ওই দিনেই। তার মধ্যেই নবান্ন হয়ে দিল্লির ডাক আসবে বলেই অপেক্ষায় রয়েছেন মহাদেব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy