রেকর্ডধারী: অশোক ঘোষ।
রেকর্ডটা তো পড়েই আছে। মালিকই শুধু নেই!
স্বাধীনতার পর থেকে মোট ১৫ বার তাঁর দলের রাজ্য শীর্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাম নেতা অশোক ঘোষ। টানা এত বছর কোনও রাজনৈতিক দলের একটি পদে থাকার রেকর্ড সম্পর্কে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠালেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
গিনেসের মেলের প্রাপ্তিস্বীকার করে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বকে অবশ্য দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, রেকর্ড থেমে গিয়েছে প্রায় দু’বছর আগে! প্রয়াত হয়েছেন অশোকবাবু। তবে জীবদ্দশায় তাঁর স্থাপন করে যাওয়া নজির গিনেস বইয়ের কোনও সংস্করণে ঠাঁই পেলে তা প্রয়াত নেতার স্মৃতিতে সম্মানজ্ঞাপনই হবে।
অশোকবাবু অবশ্য জীবদ্দশাতেই জেনে গিয়েছিলেন, তাঁর পদে থাকার ইতিহাস ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’-এ স্থান পেয়েছে। যে কোনও রেকর্ড বইয়ে স্বীকৃতি পেতে গেলে নথিপত্র জমা দিতে হয়। অশোকবাবু রাজ্য সম্পাদক থাকতে থাকতেই ফ ব-র লাইব্রেরি ঘেঁটে ১৯৫১ সাল থেকে তাঁর পদে বসার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। সেই হিসাবে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ৬৫ বছর এক টানা ওই পদে ছিলেন। যদিও অশোকবাবুর সজাগ স্মৃতি বলতো, তিনি দলের রাজ্য সংগঠনের ভার পেয়েছিলেন ১৯৪৮ সালে! কিন্তু সেই সময়কার কোনও নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি।
আরও পড়ুন: ক্লাস না-করলে ফেল করবেন, বললেন আচার্য
বিশ্ব রাজনীতিতে পল বিয়া, জসিপ টিটো, ফিদেল কাস্ত্রো, কিম ইল-সুং বা মুয়াম্মার গদ্দাফিরা দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রের মাথায় থেকেছেন। কিন্তু তথ্য নিয়ে গবেষকদের মতে, কোনও রাজনৈতিক দলের অন্যতম শীর্ষ পদে পরপর ১৫ বার নির্বাচিত হয়ে মোট ৬৫ বছর কাটিয়ে অশোকবাবু অনেক রেকর্ড ম্লান করে দিয়েছিলেন! সেই সূত্রেই গিনেস-এর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তরফে লিনেট হো তথ্য চেয়েছেন ফ ব-র কাছে। কয়েক বছর আগে যে সব তথ্য অন্য রেকর্ড বইয়ের জন্য পাঠিয়েছিলেন, সে সব সযত্ন রেখে দিয়েছেন ফ ব-র যুব নেতা সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ওঁদের জানাচ্ছি যে, পদে থাকতে থাকতেই অশোকদা প্রয়াত হয়েছেন।’’
পদ এবং রেকর্ড ছেড়ে অশোকবাবু বিদায় নিলেও তাঁর চেয়ার অবশ্য এখনও সংরক্ষিত তাঁর দফতরে। ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘চার তলার যে ঘরে অশোকদা থাকতেন, সেই ঘর একই রকম রেখে তালা দেওয়া আছে। দফতরে যে সব চেয়ারে উনি বসতেন, সেখানে এখনও কেউ বসে না।’’ মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অশোকবাবুকে ভারতীয় রাজনীতিতে একশৃঙ্গ গণ্ডার বা কৃষ্ণসার হরিণের মতো বিরল বলে বর্ণনা করে শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
বাইরে দলের হাল যা-ই হোক, ফ ব-র অন্দরে এ সব স্বীকৃতি এবং রেকর্ড এখনও অমূল্য!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy