সেই প্রেসক্রিপশন। নিজস্ব চিত্র
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। সঙ্গে চলছিল ওঝার কাছে গিয়ে তাবিজ-কবজের তুকতাক। তা জেনে রোগিণীর প্রেসক্রিপশনে ‘রেফার টু অপচিকিৎসা’ লিখে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সিউড়ি জেলা হাসপাতালের এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে।
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সরকারি নথিতে কী করে এমন নোট দিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। এতে তাঁদের অসম্মান করা হয়েছে দাবি করে বীরভূম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ), হাসপাতালের সুপার এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে নালিশ ঠুকেছে ওই রোগিণীর পরিবার। সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ির মন্তব্য, ‘‘সরকারি নথির উপরে কেউ এমন কথা লেখে! হাসপাতালের সুপারকে জানানোর পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত করাচ্ছি।’’ হাসপাতাল সুপার শোভন দে বলছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর অপরাধ! ওই চিকিৎসককে শো-কজ করা হয়েছে।’’ চিকিৎসক অবশ্য ভুল মেনেছেন।
বছর সতেরোর যে কিশোরীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বিতর্ক, তার বাড়ি সিউড়ি শহর লাগোয়া কুখুডিহি গ্রামে। চিকিৎসা পরিভাষায় সে ‘বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজ়অর্ডার’ বা মানসিক চঞ্চলতাজনিত অসুখের শিকার। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ মাস বয়স থেকেই মেয়ের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। অসম্ভব জেদ আর রাগ। চিকিৎসা চলছিল। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও অসুস্থতা বাড়তে থাকায় তাতে ছেদ পড়ে। ফেব্রুয়ারিতে জেলা হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় কিশোরীকে।
কিন্তু, চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত ওষুধ খাওয়ালেও তাবিজ-কবজ পরিয়েও রোগ সারানো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল মেয়েটির পরিবার। তার মায়ের অভিযোগ, গত ২৬ জুলাই সে কথা জেনে রেগে যান ওই চিকিৎসক। প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন— ‘রোগীর বাড়ির লোক অপচিকিৎসা করিয়েছিলেন। চারশো টাকা দিয়ে। বাড়ির লোকেদের মত অনুযায়ী, সেই চিকিৎসার পরে রোগী ভাল আছে। ওষুধের কোনও দরকার ছিল না। রেফার টু অপচিকিৎসা’।
এত দিন পরে অভিযোগ কেন? কিশোরীর বাবার দাবি, ‘‘আমি জানতাম না। সময় হলেও কেন চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে না, জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী সব কিছু জানান। তার পরেই অভিযোগ জানাই।’’
ওই চিকিৎসক অবশ্য বলছেন, ‘‘আন্তরিক ভাবে চেয়েছিলাম, মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠুক। সময় মতো ডাক্তার না দেখানো এবং ওষুধ ঠিক ভাবে না খেয়ে ওঝা-তাবিজ-কবজের শরণাপন্ন হওয়ায় ওঁদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। কথা শোনেননি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘২৬ জুলাই আমার কাছে মেয়েটিকে নিয়ে আসার পরে দেখি অবস্থা খারাপ। পরিজনেরা আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন ঘুমের ওষুধ লিখে দেওয়ার জন্য। মাথা গরম হয়ে যায়। নোট দেওয়ার রীতি থাকলেও, পরে বুঝেছি ও ভাবে লেখা ঠিক হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy