Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Jagdeep Dhankhar

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চাপ রাজ্যপালের, কঠোর রাজ্যও

এদিন রাজ্যপাল বলেছেন, রাজ্যে আইনের শাসন নেই। আর সরকারের তরফে বলা হয়েছে, নৈরাজ্য তৈরিতে মদত দিচ্ছেন রাজ্যপাল নিজেই।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।—ফাইল চিত্র।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪৬
Share: Save:

বিধানসভা অধিবেশন শুরুর মুখে আইশৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্য সরকার তথা শাসকদলের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সংঘাত চরম আকার নিল।

বৃহস্পতিবার এই বিবাদে পরস্পরের দিকে আঙুল তুলেছে দু’পক্ষই। এদিন রাজ্যপাল বলেছেন, রাজ্যে আইনের শাসন নেই। আর সরকারের তরফে বলা হয়েছে, নৈরাজ্য তৈরিতে মদত দিচ্ছেন রাজ্যপাল নিজেই।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বিধানসভার আসন্ন বাজেট অধিবেশনে তাঁর বক্তৃতায় আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া বয়ানের বাইরে পদক্ষেপ করবেন কি না তা নিয়ে সংশয় ও চাপ বাড়িয়েছেন তিনি। অন্যদিকে রাজ্য নিজের অবস্থানকে তীব্র করেছে। আপাতত সেই স্নায়ূযুদ্ধ চলছে।

এদিনই দিল্লিতে লোকসভার স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকে ধনখড়ের কাজ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে রাজ্যপালের ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে সুদীপ বলেন, ‘‘রাজ্যপাল যা বলেছেন তাতে স্পষ্ট, তিনি আর রাজ্য সরকারকে সহ্যই করতে পারছেন না।’’ স্পিকার সহ অন্য দলের প্রতিনিধিদের সুদীপবাবু বলেন, ‘‘সংসদে রাজ্যপালকে নিয়ে আলোচনা করা যায় না। কিন্তু প্রয়োজনে আমরা উল্টোপথে হাঁটব। সব দলকে সমবেতভাবে এই রাজ্যপালের আচরণের প্রতিবাদ করা উচিত।’’

ব্যারাকপুরে গাঁধীঘাটে গাঁধীজির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে এদিন সকালে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এ রাজ্যে আইনের কোনও শাসন নেই।’’ বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের কথা টেনে ধনখড় বলেন, ‘‘আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী দেখলাম— কোথায় ছিল কলকাতা পুলিশ?’’ এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনারা সেখানে এক জনও উর্দিধারীকে দেখেছেন কি?’’ আমলাদের নিশানা করে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান বলেন, ‘‘খুবই দুঃখের ব্যাপার যে তাঁরা নিজেদের দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিস্ফোরক অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে।’’ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আপনি যদি স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চান, আপনি তাঁর দেখা পাবেন না। খুবই বেদনাদায়ক পরিস্থিতি! এই অবস্থা দেখার কেউ নেই। এখানে সবাই একটাই শব্দ বোঝে—রাজনীতি।’’

রাজ্যপালের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বারবার এভাবে নৈরাজ্যের কথা প্রকাশ্যে বলে রাজ্যপাল আসলে নৈরাজ্যকেই মদত দিতে চাইছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কিছু বলার থাকলে তিনি তা সরকারকে বলতে পারেন। পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না। রাজ্যপাল পদ তো শুধু ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য নয়।’’ তাঁর বিরুদ্ধেই রাজনীতি করার অভিযোগ করে পার্থবাবু বলেন, ‘‘এই আচরণের পরে লোকে যদি এই পদে তাঁর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে তখন কী জবাব দেবেন তিনি?’’ আইনশৃঙ্খলার মতো বিষয়কে সামনে রেখে দু’পক্ষের এই বাকযুদ্ধে অনেকেই বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনের উত্তাপ আঁচ করতে চাইছেন।

গাঁধীঘাটে রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সরকারের পক্ষে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতি মেনেই রাজ্যপালকে স্বাগত জানিয়ে নমস্কার জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিনমস্কার তো দূরের কথা, রাজ্যপাল সামান্য সৌজন্যও দেখালেন না। ওঁকে দেখে রাজ্যপাল নয়, বিজেপির নেতা মনে হল।’’

বাজেট অধিবেশনের আগে রাজ্যপালের এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দুই বিরোধী কংগ্রেস ও বামেরা। বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের এই টানাপোড়েন দেখতে দেখতে রাজ্যবাসী বিরক্ত। প্রকৃত সমস্যার সমাধান কিছু হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। আইপিএস অফিসারদের বেশিরভাগই মেরুদণ্ড বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যপালের এই আচরণ শোভা পায় না। মেনে নেওয়া য়ায় না।’’ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘রাজ্যপাল পদে কেন্দ্রের শাসকদলের ঘনিষ্ঠরাই বসেন। কিন্তু এই রাজ্যপাল একেবারে খোলাখুলি বিজেপির উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করছেন। দিলীপ ঘোষ ও জগদীপ ধনখড় আসলে একই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy