Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

নিজের কর্মসূচিতে অটল থেকে ফাঁকা বিধানসভা ঘুরে ফিরে গেলেন রাজ্যপাল

তথ্য প্রযুক্তি শিল্প সম্মেলন ‘ইনফোকম’-এর উদ্বোধন করে রাজ্যপালের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘শুধু মাহারাষ্ট্রে নয়। এখানে তার রোজ চেয়েও ১০০গুণ বেশি হচ্ছে। এখানেও সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা চলছে।’’

বন্ধ বিধনসভা ভবনের তিন নম্বর গেট। তার সামনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার।—ছবি পিটিআই।

বন্ধ বিধনসভা ভবনের তিন নম্বর গেট। তার সামনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

যা হওয়ার ছিল, হলও তা-ই।

নিজের কর্মসূচিতে অটল থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বিধানসভায় যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পূর্ব ঘোষণা মতো ছিলেন না স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্য কোনও মন্ত্রী-বিধায়ক, এমনকী বিধানসভার সচিবও। বিষয়টিকে ‘গতন্ত্রের পক্ষে লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেন ধনখড়। আজ শুক্রবার অম্বেডকরের মৃত্য়ুদিন উপলক্ষ্যে তাংর মূর্তিতে মালা দিতে তিনি ফের বিধানসভা ভবনে যাবেন বলে রাজভবন থেকে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে এদিনই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফের সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তথ্য প্রযুক্তি শিল্প সম্মেলন ‘ইনফোকম’-এর উদ্বোধন করে রাজ্যপালের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘শুধু মাহারাষ্ট্রে নয়। এখানে তার রোজ চেয়েও ১০০গুণ বেশি হচ্ছে। এখানেও সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা চলছে।’’

বিধানসভার সামনে ধনখড়কে প্রশ্ন করা হয়, আপনার কাজকর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ উঠছে কেন? তিনি বলেন, ‘‘আমারও তো অভিযোগ আছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের উপায় কী? আমাকেও কি ‘দিদিকে বলো’র মাধ্যমেই বলতে হবে?’’

আরও পড়ুন: ‘ভুখা’ ঢাকতেই ধর্মীয় বিভাজন ‘ইনফোকম’-এ বললেন মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্যপালের বিধানসভা দর্শন নিয়ে মুখ খুলেছেন পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিধানসভায় অধ্যক্ষই প্রথম ও শেষ কথা। বিধানসভা কেন বন্ধ ছিল, তা নিয়ে রাজ্যপালকে ভাবতে হবে না।’’

এদিন সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ রাজ্যপালের কনভয় এসে দাঁড়ায় বিধানসভার ৩ নম্বর গেটে। সাধারণত রাজ্যপালের জন্য এই গেটই ব্যবহার করা হয়। গাড়ি থেকে নেমে রাজ্যপাল এগিয়ে যান। কিন্তু গেটটি বন্ধ ছিল। শিকল নেড়ে দেখে ফুটপাথ ধরে পাশের ২ নম্বর গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। এবং তখনই বলেন, ‘‘অধিবেশন না থাকলেও বিধানসভা বন্ধ থাকার কথা নয়। আমাকে সস্ত্রীক মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানানো হল। তারপর কী এমন হল যে স্পিকার নেই? সচিব নেই? গেট বন্ধ!’’

স্পিকার অবশ্য রাজ্যপালের এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিধানসভা বন্ধ ছিল না। গেট দিয়েই তো রাজ্যপাল ভিতরে এসেছেন। বিশেষ কাজে আমি সেই সময় থাকতে পারব না, তা-ও তাঁকে আগেই জানানো হয়েছিল।’’

রাজ্যপাল ২ নম্বর গেটের সামনে পৌঁছলে তাঁর ঢোকার জন্য তা খুলে দেওয়া হয়। তবে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঢুকতে পারেননি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। সঙ্গী নিরাপত্তারক্ষীদের রাজ্যপাল ভিতরে গেলেও রাজভবনের আলোকচিত্রী প্রবেশাধিকার পাননি।

তারপর লাইব্রেরি দিকে এগোলেও তা খোলা নেই জেনে রাজ্যপাল পিছনের ভিআইপি পোর্টিকো হয়ে মূল ভবনে পা রাখেন। এগিয়ে যান ভিতরের ভিআইপি করিডর ধরে। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, পঞ্চায়েতমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বিদ্যুৎমন্ত্রীর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ‘নেমপ্লেট’-এ চোখ বোলান। মোবাইলে ছবিও তোলা হয়। তারপর তিনি লিফটে চড়ে চলে যান দোতলায়। সচিবের খোঁজে গিয়ে দেখেন ঘর ফাঁকা। সেখান থেকে নেমে এসে এদিকওদিক কাউকে না পেয়ে শাসকদলের বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে যান ধনখড়। সেখানেও কেউ না থাকায় এগিয়ে সরকারপক্ষের মুখ্যসচেতকের অফিসে ঢুকে তাঁর সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন, ঘরটি কার। মিনিটখানেক কথা বলে রাজ্যপাল বেরিয়ে আসেন স্পিকারের ঘরের সামনে। সে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে অ্যান্টি চেম্বারের দরজা ঠেলে দেখেন সেখানেও অন্ধকার।

অল্প পরেই তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং বিধানসভা ছেড়ে যাওয়ার আগে বলে যান, ‘‘আমি ব্যথিত। আমার হৃদয় রক্তাক্ত।’’ সেই সময় অবশ্য সেখানে পৌঁছে যান বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আবদুল মান্নান। তিনি রাজ্যপালের বার্তা পেয়ে দেখা করতেই এসেছিলেন। দু’জনের সৌজন্য বিনিময় ছাড়া আর কিছু নেই। মান্নান বলেন, ‘‘দায় কার তার থেকেও বড় এই পরিস্থিতি কাম্য নয়। সংঘাত চাই না।’’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সঙ্গে এইরকম ব্যবহার করা হলে সাধারণ মানুষ কী অবস্থায় আছে তা বোঝা যায়।’’

রাজ্যপালের বিধানসভা ভ্রমণকে নস্যাৎ করতে মন্ত্রী পার্থবাবুর বক্তব্য ছিল খুবই ধারালো। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বিধানসভায় আসতেই পারেন। যখন বিধানসভা খোলা থাকবে, তখন এলে তো দর্শকাসনে বসে দেখতে পারতেন সব। স্কুলের ছাত্ররা যেমন গ্যালারিতে বসে অধিবেশন দেখে।’’ তাঁর আরও খোঁচা, ‘‘বোধহয় কালীঘাট মন্দির, রবীন্দ্রনাথের বাড়ি দেখা বাকি আছে রাজ্যপালের। চিড়িয়াখানাটাও দেখা বাকি। সেটা জনসংযোগের ভাল জায়গা হতে পারে। ওঁর ঘুরে দেখা উচিত।’’ রাজ্যের আরেক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘রাজ্যপালের অভিপ্রায় ছিল নাটক করার। সেটাই তিনি করেছেন।’’ পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপালের শুববুদ্ধির উদয় হোক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jagdeep Dhankhar Assembly Governor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy