Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

আমি সমান্তরাল প্রশাসন চালালে তো আমারও কাট-আউট থাকত: ধনখড়

সোমবার শিলিগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন রাজ্যপাল। পরে সেই অনুষ্ঠান সেরে স্টেট গেস্ট হাউসে এসে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে কথা বলেন তিনি।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ যে হাতে রয়েছে, তা কী ভাবে বোঝা যাবে? রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের মতে, ‘কাট-আউট’-এর মাধ্যমে।

সোমবার শিলিগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন রাজ্যপাল। পরে সেই অনুষ্ঠান সেরে স্টেট গেস্ট হাউসে এসে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে কথা বলেন তিনি। সেখানেই সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘বিমানবন্দর থেকে আসার সময় দেখলাম মুখ্যমন্ত্রীর সারি সারি কাট-আউট। আমি সমান্তরাল প্রশাসন চালালে তো আমারও কাট-আউট থাকত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি সমান্তরাল প্রশাসন চালালে, কী কী সরকারি সিদ্ধান্ত নিলাম, সেগুলো বলুন। ৫০ দিন হয়ে গেল, মুখ্যসচিব দেখা করার সময় পেলেন না। আমি প্রশাসন চালালে কি তা হত? আমি শহরে এলে পুলিশ কমিশনার, জেলাশাসকেরা থাকবেন। তা কি হয়?’’ যে প্রসঙ্গের জবাবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী সব বলছেন! তিনি তো আইনজ্ঞ। ওঁর কাট-আউট থাকবে? তিনি কি রাজনীতিক? এ সব বলতে বলতে ওঁর দাঁতের সমস্যা হতে পারে।’’ নবান্নের পাল্টা কটাক্ষ, ৫০ দিনের মধ্যে রাজ্যপাল কি কখনও মুখ্যসচিবকে ডেকেছিলেন?

এ দিন রাজ্যপাল সরাসরি রাজ্য প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘এর আগে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়েছিলাম আমি। তখন জেলাশাসকেরা চিঠি দিয়ে আমাকে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার নিষেধ করায় তাঁরা আসতে পারেননি।’’ এ ধরনের কোনও ‘নিষেধের’ কথা সরাসরি অস্বীকার করেছে নবান্ন। সরকারি সূত্রে খবর, ওই দু’জনের মধ্যে এক জেলাশাসক রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, কোনও বরিষ্ঠ আমলা বা পুলিশ আধিকারিককে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের অনুমতি ছাড়া জেলাশাসক আসার কথা বলতে পারেন না। তবে এ দিনও তিনি নির্দিষ্ট ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে এই তিরের আওতার বাইরেই রাখেন।

আরও পড়ুন: রাজ্যপাল থেকে ‘রাজনীতিপাল’ হয়ে উঠবেন না, ধনখড়ের ভূমিকা নিয়ে রাজ্যসভায় সরব তৃণমূল

তবে তিনি যে নিজের কাজের পদ্ধতি বদলাবেন না, সেটা রাজ্যপাল এ দিন আরও এক বার স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালের হিসেবে যে কাজ শুরু করেছি, তা মাঝপথে ছাড়ব না। সংবিধানের শপথ নিয়ে যে কাজ শুরু করেছি, তা করে যাব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও কোণে যেতে কারও অনুমতি লাগবে না আমার। আমি যে কোনও জায়গায় যেতে পারি। আর আমি যাব। আমি জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারকে আগাম জানিয়েই সফর করি। যাতে পুলিশ বা সার্কিট হাউসের ব্যবস্থা করতে সুবিধা হয়।’’ এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘প্রশাসনিক বৈঠক করি না। মন্ত্রীদের আমার সচিবেরা চিঠি লেখেন। আমি একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখি। অনেক লিখেছি। সেগুলি সম্পর্কে বাইরে মন্তব্য করব না।’’

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় জেলায় যাওয়া শুরু করার পরেই রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের আবহ তৈরি হয়। প্রশাসন এবং শাসক দলের পক্ষ থেকে একাধিক বার বলা হয়, তিনি সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছেন। বলা হয়, রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর সাংবিধানিক সীমারেখা মাথায় রেখে কাজ করা উচিত। এর জবাবে আগেই রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তিনি লক্ষ্মণরেখা মেনে চলছেন। বরং অন্যদেরও যে সেটা মেনেই চলা উচিত, সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী কখনও সরাসরি রাজ্যপালকে নিয়ে কিছু বলেননি। তবে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি পরোক্ষে রাজ্যপালকে বিঁধেছেন। এ দিন রাজ্যপাল-রাজ্য সরকার সংঘাত প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘যা ঘটছে, রাজ্যের পক্ষে তা মঙ্গলজনক নয়। রাজ্যপাল তাঁর নিজের সরকারকেই বারবার বিঁধছেন। আবার রাজ্য সরকারও রাজ্যপালের প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে আক্রমণ করে চলেছে।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি পুজোর উদ্বোধনে হেলিকপ্টারে যেতে পারেন, তবে রাজ্যপালও অনুষ্ঠানে যেতে হেলিকপ্টার চাইতে পারেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jagdeep Dhankhar Mamata Bnaerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy